বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান না করাই ভালো। ফার্স্ট ইয়ারে জোর করে মিছিলে/গেস্টরুমে নিয়ে গেলেও আস্তে আস্তে কেটে পড়ো। অনেক বই পড়ো। ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর বই পড়ার ফুসরত মিলবে না। ভার্সিটিতে থাকতে যে অনেক বই পড়ে বেরিয়েছে আর যে তেমন কোনো বই না পড়ে বেরিয়েছে, তারা দুজন আলাদা মানুষ হয়ে বেরিয়েছে।
চারদিকটাকে মুক্ত মন নিয়ে দেখতে পারার অনুশীলন করো। পৃথিবী অনেক বড়। একটা ছেলে সিগারেট খায় মানেই সে লম্পট নয়, একটা মেয়ে জিনস পরে মানেই সে খারাপ মেয়ে নয়। হাবাগোবা ভাব নিয়ে থাকা ছেলেটার ভেতরও থাকতে পারে দুনিয়ার কূটনামি। ফলে, কাউকে সহজেই জাজ করো না।
ছোটো কিছুর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না। লেট গো। নিজের প্রায়োরিটিতে সময় দাও। বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একাকীত্ব আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। জোর করে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা বা ভালো না লাগলেও কারো সাথে জোর করে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার মানে নেই। হইহুল্লোড় ভালো কিন্তু নিজের জন্যও একটু নিরালা সময় রেখো।
সবাই খারাপ, আমি ভালো—এই মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে নিজের ক্ষুদ্রতা আর দীনতা আবিস্কার করতে চেষ্টা করো, জীবন বদলে যাবে। জীবনকে উপভোগ করো, অপচয় করো না। মনে রাখা দরকার অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো না। সেটা আড্ডা, সিগারেট, মদ, গাঁজা, প্রেম—যাই হোক না কেন। কোনো নেশায় আসক্ত হয়ো না।
নারীদের ব্যাপারে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব কাটিয়ে ওঠো। ভার্সিটির অধিকাংশ মেয়ে তোমার চেয়ে মেধাবী, ভুলে যেও না। মেয়েদেরকে বলি, তীব্র স্বার্থপরতা আর রোমান্টিকতাকে এক করে দেখো না। তুমি কারও জীবনের সব নও, হওয়া সম্ভব না, হওয়া জাস্টিফাইডও না। একজন হার্মলেস ভালো পুরুষই তোমার জন্য যথেষ্ট।
ভার্সিটি শুধু চিল করার জায়গা না। খারাপ সিজিপিএ গর্বের কোনো বিষয় না। বরং ভালো একটা রেজাল্ট জীবনের অনেক দরজা খুলে দিতে পারে। সবকিছুর মাঝেও নিয়মিত লেখাপড়া করো। ভার্সিটিতে মোটামুটি রেজাল্ট করা খুব কঠিন না।
শেষ কথা—দুনিয়াতে যত অহংকার আছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো ইনস্টিটিউশনাল প্রাইড। আমি অমুক ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী। এই অহংকার ছোটোলোকি ছাড়া কিছু না। এটা অনেকটা পৌত্তলিকতা। এই অহংকারের ফাঁদে নিজেকে ফেলো না। তোমার চেয়ে অনেক বড় বড় মেধাবী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই দেশের এবং দুনিয়ার নানা জায়গায়।
মুরাদ কিবরিয়া,লেখক ও চার্টার্ড একাউন্টেন্ট