পাঠদান ছারা অন্য কোন কাজ নয়-সচিব

ঢাকা : শিক্ষকতার চেয়ে অন্যান্য কাজে শিক্ষকরা বেশি জড়িয়ে পড়ায় প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দিয়েছে।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই উপানুষ্ঠানিক পত্রে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠ নয় এমন কাজে শিক্ষকদের না জড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন।

তবে শিক্ষা সচিব তাঁর চিঠিতে শুধুমাত্র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বাদে পাঠদান-বহির্ভূত অন্য সব কাজ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরত রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ্য করেন।

মো. আকরাম আল হোসেন জানান, সম্প্রতিক সময়ে মূল কাজ শিক্ষকতার চেয়ে অন্যান্য কাজে শিক্ষকরা বেশি জড়িয়ে পড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। যা সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে এটি হুমকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের নির্বাচনী কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ না দিতে এই পত্র দেওয়া হয়েছে।’

চিঠিতে সচিব মো. আকরাম আল হোসেন আরো উল্লেখ করেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতি প্রতি ৩৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র একজন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০ ভাগ মহিলা শিক্ষক। তাদের ৬ মাসব্যাপী মাতৃত্বকালীন ছুটি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির কারণে পদস্থ শিক্ষকদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায়শই কম থাকে। তা ছাড়া শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৯ মাস ব্যাপী সিইনএড প্রশিক্ষণের পরিবর্তে দেড় বছরব্যাপী ডিপিইএড প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ প্রশিক্ষণ গ্রহণে ন্যস্ত থাকেন। ফলে প্রায় সকল শিক্ষকের অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণসহ শিখন কার্যক্রমে অতিরিক্ত সময় নিয়োজিত থাকতে হয়।

চিঠিতে বলা হয়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে শিক্ষকদের শিখন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকার পরিবেশ ও সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা শিখন সংশ্লিষ্ট নয় এরূপ কার্যক্রমে শিক্ষকদের বিরত রাখা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র নির্বাচন কার্যক্রম ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রম থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব প্রদান না করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাযোগ্য বলে মনে করি।

তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন, পাঠদান ছাড়া বিদ্যালয়ের করণিক কাজও তাদের করতে হয় শিক্ষকদের। কেননা, কোনো স্কুলে এই কাজ করার সহকারী বা কেরানি নেই। তাদের ওইসব কাজের মধ্যে আছে, প্রত্যেক মাসে ছাত্র হাজিরা খাতায় নাম ওঠানো, দৈনন্দিন উপস্থিতি-অনুপস্থিতি হিসাব সংরক্ষণ, হোম ভিজিট, উপকরণ তৈরি, দৈনিক পাঠ পরিকল্পনা তৈরি, বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি তথ্য, প্রাথমিক শিক্ষক সমাপনী সার্টিফিকেট লেখা, বছরে তিনটা পরীক্ষা ছাড়াও মডেল টেস্ট, সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষার নির্ভুল তথ্য পূরণ ইত্যাদি। নাম প্রকাশ না করে সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, এত কাজ করতে গিয়ে স্কুলের বাইরে শিক্ষকদের সময় ব্যয় করতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, যা মানসম্মত শিক্ষার প্রধান প্রতিবন্ধক।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রায় সোয়া চার লাখ শিক্ষক। শিক্ষকদের পরিবর্তে যদি সমাজের শিক্ষিত বেকার ও ছাত্রছাত্রীদের আদমশুমারি টিকাদানসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করা হয় তাহলে সচিবের এই চিঠি শিক্ষার জন্য ইতিবাচক ফলই বয়ে আনবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা।

উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কাজ ছাড়াও ১৩ ধরনের কাজের মধ্যে- ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা, শিশু জরিপ, আদমশুমারি, কৃষিশুমারি, খোলাবাজারে চাল বিক্রি তদারকি, কাঁচা-পাকা ল্যাট্রিনের শুমারি, কৃমির ট্যাবলেট, ভিটামিন-এ ক্যাপসুলসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সব কাজই করতে হয়।



Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।