তাপদাহের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Image

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী তিন দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রোববার খুলছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এই দাবদাহের মধ্যে না খুলে আগামী সাতদিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। তবে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন।

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটি সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন ছুটি কাটিয়ে রোববার ফের ক্লাসে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন এক সময় খুলছে যখন দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ওই বৈঠকে হয়নি।

আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানোর দাবি

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর সৈয়দ জাফর আলী বলেন, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কী করণীয় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ছুটি বাড়ানো বা বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করতে হয়। কারণ হিট এল্যার্ট বা অন্য কিছু ঘোষণা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ রাখতে হয় তবে তাদের পরামর্শে তা করা হয়। এই যোগাযোগ করবে মন্ত্রণালয়। তবে আপাতত বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের এক ছাত্রীর বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এর মধ্যে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। কারণ স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়তে হয়। এছাড়াও ঢাকায় প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে‌। এ অবস্থায় নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে স্বাভাবিক কারণেই ভয় পেতে হচ্ছে।

লালবাগ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্কুলে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে উঠতে হয়। এ ছাড়াও দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হয়। স্কুলের ড্রেসের কারণে অনেকেই খোলামেলা পোশাক পরতে পারে না। এসবের সাথে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে।

আরও কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে বিশেষ করে দিবা শাখার শিক্ষার্থীদেরই বেশি কষ্ট হবে। জুতা-মোজাসহ স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে যানবাহনে বা হেঁটে স্কুলে প্রবেশের আগেই ঘেমে অস্থির হয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। এই গরমের মধ্যে পিটি, কোথাও ভারী ব্যাগ নিয়ে বহুতল ভবনের সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসে যেতে হয়।‌

হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ফ্যান সুবিধাও নেই। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক আলো-বাতাসও পৌঁছায় না। আবার কোনো কোনো স্কুলের ক্লাসে জানালায় পর্দা না থাকায় সূর্যের তাপে বসেই ক্লাস করতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিও বাড়বে।

অন্যদিকে কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে বর্ষা মৌসুম। এই মৌসুমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেবে। এমন শষ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজের সন্তানকে পাঠানো নিযে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। দাবদাহ থেকে বাচঁতে শিক্ষার্থীদের কী করণীয় তার কোনো নির্দেশনা দেয়নি শিক্ষা অধিদপ্তর।

এদিকে আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম দাবদাহ আগামী শনিবার থেকে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে রোববার শিশুদের স্কুলে পাঠাবেন কি না এমন চিন্তায় আছে অভিভাবকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, বাচ্চাদের স্কুলে সার্বক্ষণিক ফ্যান চালু রাখতে হবে। যেখানে ফ্যান নেই সেখানে হাত পাখা রাখতে হবে। আর সেসব স্কুলের এসি আছে সেটা চালু রাখতে হবে। সাথে ভেজা কাপড়, তোয়ালে দিয়ে দিতে হবে। যখন শরীর অতিরিক্ত ঘামবে তখন শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। স্কুলের ব্যাগে জুস, পানি এবং তরল জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। কোনো শিশু তাপমাত্রা জনিত রোগে আক্রান্ত হলে বা প্রেশার কমে গেলে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।