জাল সনদ: এনটিআরসিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ

Image

ডেস্ক,২৯ সেপ্টেম্বর:
জাতীয়করণ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সনদ যাচাইয়ে জাল চিহ্নিত হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের ১০টি প্রতিবেদনে ২০ জন শিক্ষকের জাল শিক্ষা সনদ চিহ্নিত করা হয়। মূল সনদের রোল নম্বর ব্যবহার করে এসব জাল সনদ তৈরি করা হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আর কয়েকটি সনদের রোল নম্বর যাচাই করে ফলাফলের তালিকায় তা পাওয়া যায়নি।
এই সনদ জালিয়াতির ঘটনায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই জালিয়াতি নিয়ে শিক্ষকদের অভিমত, শুধু শিক্ষকরাই জড়িত নন, জালিয়াতির সঙ্গে এক শ্রেণির এনটিআরসিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জালিয়াত চক্রের অনুসন্ধান করে তাদের দোষীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ’

শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এনটিআরসিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আকরাম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাল শিক্ষক সনদ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিঁয়াজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধান করতে হবে কিভাবে তারা জাল সনদ সংগ্রহ করলেন? কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছেন? সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এই জাল সনদের সঙ্গে জড়িত। নিরীহ শিক্ষকদের বেকায়দা বুঝে জাল সনদের ব্যবস্থা করেছে একটি চক্র। সনদ জালের উৎসে অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জানতে চাইলে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উত্তর মেরামতপুর স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘সনদ জালিয়াতির সঙ্গে এনটিআরসিএ-এর এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কাছ থেকে দালালদের মাধ্যমে শিক্ষকরা সনদ কিনেছেন টাকা দিয়ে। দেশে ৪০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষক জাল সনদে চাকরি করছেন। এ জন্য এনটিআরসিএ দায়ী। ২০০৫ সালের আগে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন কিন্তু নিয়োগপত্র পেয়েছেন পরে তাদের অনেকেই এমপিওভুক্তির জন্য জাল সনদ কিনেছেন। শিক্ষকতার জন্য জরুরিভিত্তিতে সনদের প্রয়োজনে শিক্ষকরা যখন দিশেহারা, তখন সনদ কিনতে পাওয়া গেছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায়।’

মো. মোখলেসুর আরও রহমান বলেন, ‘রংপুরের জাল সনদে দূরের জেলার অন্য বিষয়ের সনদের রোল নম্বর হুবহু মিলিয়ে শিক্ষকরা জাল সনদ তৈরি করতে পারবেন না। এনটিআরসিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে সম্ভব নয়। জাল চক্র খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এনটিআরসিএ প্রকাশিত চলতি সেপ্টেম্বরের ১০টি প্রতিবেদনে ২০টি জাল সনদ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাতীয়করণ করা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের আট জন প্রভাষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ভুয়া বা জাল। শিক্ষক আত্তীকরণে সনদ যাচাই করলে ভুয়া বলে প্রমাণ পায় এনটিআরসিএ। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে একই কলেজের আরও একজন শিক্ষকের জাল সনদ চিহ্নিত হয়।

কলেজটির আটজন শিক্ষকের মধ্যে সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক সুরাইয়া বেগমের জমা দেওয়া সনদে রুজিনা আক্তার নামের অন্য এক জনের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মোসা. হাসিনা আক্তারের জমা দেওয়া সনদের জাহাঙ্গীর আলম নামের অন্য এক জনের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক দিল রওশন আরার জমা দেওয়া সনদে বদরুল আমিনের সনদের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বরের অন্য একটি প্রতিবেদনে আরও দুই জন শিক্ষকের সনদ জাল চিহ্নিত করা হয়েছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. লতিফুজ্জামান ও মনিকা রানী রায়ের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল। মো. লতিফুজ্জামানের জমা দেওয়া সনদটি সাইফুল ইসলাম নামের এক জনের সনদ জাল করা হয়েছে। আর মনিকা রানী রায়ের জমা দেওয়া সনদটি মিজানুর রহমান নামের একজনের সনদ জাল করে করা হয়েছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয়করণ করা রংপুরের বদরগঞ্জ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শামীম আল মামুনের সনদটি রাজবাড়ী জেলার ভূগোল বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের সনদ জাল করে করা হয়েছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাতীয়করণ করা নওগাঁর নিয়ামত সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. আসাদ আলীর জমা দেওয়া সনদে মো. আব্দুল খালেকের সনদের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আরেক প্রভাষক সুরুজ কুমারের জমা দেওয়া সনদে আব্দুস সালামের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

১৭ সেপ্টেম্বরের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ইতিহাসের প্রভাষক ফাতেমা খাতুনের জমা দেওয়া সনদে আব্দুল লতিফের রোল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

এই সব সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জালিয়াত চক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন শিক্ষকরা। কারণ এনটিআরসিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ জড়িত থাকলেও এতদিন পর তা প্রমাণ করার সুযোগ নেই।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।