বেরোবি প্রতিনিধি : ৬ মে : দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূর উন নবীর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ মে)। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার গভীর রাতে নিভৃতেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি। উপাচার্যের বাসভবনের পেছনের দরজা দিয়ে একটি ভাড়া করা মাইক্রেবাসে করে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যান।
উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক নূর উন নবীর চার বছর পূর্ণ হয় ৫ মে। এদিন তিনি দিনভর ক্যাম্পাসে তার বাসভবনে কাটিয়েছেন। একবারের জন্য তিনি বাইরে বের হননি। সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়ে যায় উপাচার্য যে কোনও সময় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যাবেন। এরপরই গণমাধ্যম কর্মীরা ক্যাম্পাসে তার বাসভবনের সামনে ভিড় করতে থাকেন। বেশ কয়েকবার অধ্যাপক নূর উন নবী বের হওয়ার চেষ্টা করলেও ক্যামেরা দেখে আবার বাড়িতে ফিরে গেছেন। অবশেষে রাত ১২ টা ৩৮ মিনিটে তার বাসার পেছনের ছোট্ট দরজা দিয়ে বের হয়ে একটি ভাড়া করা মাইক্রেবাসে উঠে চলে যান। গণমাধ্যম কর্মীরা অনেক চেষ্টা করলেও তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলেননি।
ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে একটি সাদা কাগজে নিজ হাতে অধ্যাপক নূর উন নবী একটি চিঠি লিখে দিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি বলেও জানা গেছে।
এদিকে উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে তার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাবেক সভাপতি আপেল মাহমুদ, শিক্ষক জোবায়ের ইবনে তাহের ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. নাজমুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ শাখার দুই সহকারী পরিচালক মোতালেব হোসেন, আশরাফুল হক, সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে বিদায় জানাতে তার বাসভবনে যান। তারা অনেকক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন। তবে বিদায়ী উপাচার্যের সঙ্গে তাদের কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে কেউই কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
তবে শিক্ষকদের সংগঠনের নীল দলের সাবেক সভাপতি আপেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ‘উপাচার্য শুক্রবার দিনভর তার বাসাতেই অফিস করেছেন। এটা উনি করতেই পারেন। কারণ তার বাসাতেই একটি অফিস আছে।’ তবে চলে যাওয়ার আগে কেন উপাচার্য এমন লোকচুরি করলেন সেব্যাপারে জানতে চাইলে আপেল মাহমুদ কোনও মন্তব্য করেননি।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, উপাচার্য চলে যাওয়ার আগে তার সমর্থক শিক্ষকদের খালি থাকা ডীন, বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন বলে মনে করা হলেও তিনি তা করেননি। ফলে তার সমর্থক শিক্ষকরা অনেকেই দেখা করতে আসেননি।
উল্লেখ্য, বেরোবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি ছয়টি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির গঠিত সর্বশেষ কমিটি বেরোবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ভর্তি পরীক্ষা ও আপ্যায়নের টাকা নিয়ে অনিয়ম, সরকারি গাড়ি ব্যবহারের স্বেচ্ছাচারিতা, উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, একসঙ্গে ১৪টি পদ ধরে রাখা, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে সুপারিশ করবে মন্ত্রণালয়। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন উপাচার্য একেএম নূর-উর-নবী।