নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা, ২৬ জুন, ২০১৫: এন্ডোস্কোপি নয়, শুধু শ্বাসের একটা পরীক্ষা। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেটা থেকেই জানা যাবে কারও খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়েছে কি না। আর এই পরীক্ষার উপরে অন্তত ৯০ শতাংশ ভরসা করা যায়, তেমনটাই দাবি ব্রিটিশ গবেষকদের। তাঁদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যানালস অব সার্জারি’ নামে একটি পত্রিকায়।
২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ২১০ জন রোগীর উপরে এই পরীক্ষা চালিয়ে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে তাঁদের দাবি। এ বার লন্ডনের তিনটি হাসপাতালে আরও বেশি সংখ্যক রোগীর উপরে এই পরীক্ষা চালানো হবে। খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে ক্যানসার হয়েছে কি না বুঝতে চিকিৎসকরা সাধারণত এন্ডোস্কোপি করে থাকেন। এই পদ্ধতিতে মুখের ভিতর দিয়ে একটি নলের মতো জিনিস ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং পুরোটাই ধরা পড়ে ভিডিও ক্যামেরায়। তবে এন্ডোস্কোপি খরচসাপেক্ষ। তা ছাড়া, সাধারণ চিকিৎসকরা যত সংখ্যক রোগীকে এন্ডোস্কোপি করানোর কথা বলেন, তার মধ্যে মাত্র দু’শতাংশের খাদ্যনালি বা পাকস্থলীর ক্যানসার ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি অনেকটাই সহজ। রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বুঝতে যে যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর শ্বাস পরীক্ষা করা হয়, অনেকটা তেমনই যন্ত্রে মুখ লাগিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে রোগীকে। যন্ত্রটি লাগানো থাকবে একটি ব্যাগে।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের প্রধান গবেষক জর্জ হানা বলছেন, ‘‘আমাদের এই শ্বাস পরীক্ষায় ক্যানসারের একেবারে গোড়ার দিককার লক্ষণগুলি ধরা পড়বে। এর ফলে এন্ডোস্কোপি করানো অনেক কমে যাবে।’’ হানার দাবি, গোড়ায় ধরা পড়লে রোগী অনেক বেশি চিকিৎসার সুযোগ পাবেন এবং সব চেয়ে বড় কথা, তাঁদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর নিঃশ্বাসে বিশেষ কিছু রাসায়নিক উপাদান খুঁজে বার করা হবে যেগুলি শুধু খাদ্যনালি বা পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হলেই পাওয়া সম্ভব।
তবে ক্যানসার চিকিৎসকেরা এখনও এই পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দিহান। ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টা এখনও পর্যন্ত খুবই অস্পষ্ট। খাদ্যনালির ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ বেশির ভাগ সময়েই থাকে না। আর শ্বাসের পরীক্ষায় পাকস্থলীর ক্যানসার কী ভাবে ধরা পড়তে পারে, সেটা চিকিৎসক হিসেবে আমার কাছে স্পষ্ট নয়।’’ ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকে এন্ডোস্কোপি করাতে চান না। নল ঢোকাতে হবে বলে ভয় পান। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এন্ডোস্কোপিটাই ওই দুই ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্বীকৃত পদ্ধতি। তা ছাড়া এন্ডোস্কোপি করে শুধু দেখা নয়, বায়োপসির জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা যায়। নিঃশ্বাসের পরীক্ষায় সেটা কী ভাবে সম্ভব তা জানা দরকার। কারণ ক্যানসার চিকিৎসায় বায়োপসি ছাড়া চলবে না।’’
সুত্র: আনন্দবাজার