ডেস্ক,২৩ অক্টোবর ২০২২:
প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পৃথক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি লাঘবের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে স্বকীয়তা এবং গুণগত মান বজায় না থাকার অজুহাতে এই প্রক্রিয়ায় যেতে চায় না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইউজিসি বলছে, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি কমন পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা জরুরি। এতে করে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি বড় অঙ্কের আর্থিক সাশ্রয় হবে। ভারতে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির (এনটিএ) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। পরবর্তীতে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।
তাদের মতে, বর্তমানে তিনটি গুচ্ছে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। তবে বড় বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পুরোপুরি লাঘব হয়নি। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসাথে নেওয়ার জন্য তারা ভারতের মতো ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি নামক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চান। তবে এই ক্ষমতা ইউজিসির হাতে নেই। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ভারত যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটি অত্যন্ত ভালো। আপনি একটি পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করছেন। এটি কেবল ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশেই অনুসরণ করা হয়। আমাদের দেশে এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে পারলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বড় ধরনের ভোগান্তি কমত।
এনটিএ গঠনে বাঁধা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, এনটিএ গঠন করতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা আপনারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি এককভাবে কিছু করতে পারবে না। বড় বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় আনতে হলে সরকারকেই একটি উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি। দেখা যাক কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারি।
এদিকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন সংক্রান্ত ইউজিসি’র পরিকল্পনার সাথে একমত হতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ঢাবির একটি নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। প্রশ্নপত্রের একটি স্ট্যান্ডার্ড মান রয়েছে। গুচ্ছ কিংবা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় গেলে এই স্বকীয়তা বজায় থাকবে না। এছাড়া বড় পরিসরে ভর্তি পরীক্ষা হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এই কারণেই তারা গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেতে চান না।
এ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করার আগে আমাদের সক্ষমতা আছে কিনা সেটি দেখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিজস্বতা আছে। এর বাইরে গেলে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আমরা শিক্ষার্থীদের কঠোরভাবে যাচাই করে ভর্তি করি।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় গেলে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে আয়োজন করা হবে সেই পরিকল্পনা আগে ইউজিসির প্রকাশ করা দরকার। কেননা আপনি যখন ১০ থেকে ১২ লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা একত্রিতভাবে আয়োজন করতে যাবেন তখন প্রশ্নফাঁসের একটি সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কলেজগুলোতে পরীক্ষার কেন্দ্র করতে হবে। যেখানে প্রশ্নফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এতে করে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবকিছু ভেবে দেখা দরকার বলেও জানান তিনি।
এদিকে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এটাকে বড় ধরনের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে ধরা হচ্ছে। এই অর্থ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পকেট থেকেই যাচ্ছে। যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তারা প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। ভারতের মতো কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা গেলে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলত।
তাদের মতে, আমরা অনেক কিছুতেই ভারতকে অনুসরণ করে থাকি। ফলে ভারতের মতো ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি গঠন করে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা গেলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের পকেট কাটা বন্ধ হবে। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীককে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।