ডেস্ক,৩০ ডিসেম্বর ২০২১:
২০২২ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সব বিষয়ে পরীক্ষার হলে প্রস্তুতি হবে এক রকম। গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হলে প্রস্তুতি নিতে হবে আলাদা। আগামী বছরের পরীক্ষা কেমন হবে এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সংশয়। অনেকের ধারণা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা। এসব সংশয় দূর করেছেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সম্ভব হলে সব বিষয়েই পরীক্ষা নেয়া হবে। আর যদি একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে। এখন পর্যন্ত তিনি আশা করছেন, সব বিষয়ের পরীক্ষাই নিতে পারবেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে দোলাচল শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে আট মাস পর গত ১৪ নভেম্বর শুরু হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এবার অন্য বছরের মতো সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। শুধু গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি) তিনটি বিষয়ের ওপর সময় ও নম্বর কমিয়ে এ পরীক্ষা হয়। এসব বিষয়ে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ‘ম্যাপিং’ করে নম্বর দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, তাহলে আগামী বছরের মাঝামাঝি এসএসসি পরীক্ষা এবং তার পরপর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারবেন। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের এখন থেকেই প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার রেওয়াজ থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে। পরীক্ষা স্বাভাবিক সময়ে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা থাকবে। যদি খুব বেশি অসুবিধা না হয়, তাহলে আগামী বছরের পরীক্ষাটা জুন-জুলাইয়ের মধ্যে করে ফেলার চেষ্টা করবো। তবে সবকিছু নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির ওপর।
অন্যদিকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৮টি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা অনেক দিন থেকে এ বিষয়টিতে নজর দিচ্ছি। এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন থাকবে, যেখানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারবে না। আমাদের জন্য এক অর্থে খুবই স্বস্তিকর যে, ১০৪ থেকে এই সংখ্যাটি ১৮ -তে নেমে এসেছে। আমরা চাই যে, এরকম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে না, যেখানে একজনও পাস করবে না। কারণগুলো এবারও খুঁজে দেখে সমাধানের চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক নানা কারণ থাকে, হয়তো প্রতিষ্ঠানের অবস্থা একেবারেই ভালো নয় বা অন্য কিছু। যে কারণই থাকুক আমরা কারণগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো দূর করবার চেষ্টা করবো।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পরও ৬ শতাংশের মতো অকৃতকার্য হয়েছে, এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকেরই অনেক রকমের প্রতিবন্ধকতা থাকে, অনেক সমস্যা থাকে। কেউ পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে যায়, ভয় পেয়ে যায়, আমরা নিজেরাও জীবনের অনেক দূর পার করে এসেছি, আমরা জানি পরীক্ষা সব সময় এক রকম হয় না। এমনকি ভালো পড়াশোনা করেছে, ভালো প্রস্তুতি ছিল এরপরও অনেক সময় পরীক্ষা ভালো হয় না।
মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে সেটা ভালো। এই সময়টায় অনেক চাপের মধ্য দিয়ে আমাদের পরীক্ষার্থীরা গেছে। পারিবারিক থেকে শুরু করে নানান ধরনের সমস্যা ছিল, কোভিডের কারণে বাড়তি অনেক চাপ ছিল। অনেক ট্রমার মধ্য দিয়েও গেছে যে পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-পরিজন বা পরিবারের কাউকে হারিয়েছে তারা। সেগুলোকেও বিবেচনায় নেয়ার দরকার আছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৭৮ হাজার, ৯৮ জন। তিন হাজার ৬৮৫টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন অংশ নেয়। এর মধ্য উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ৩৭ হাজার ৭০৩ জন।