শনিবার ভোরে বাবাকে ফোন দিয়েছিল ভারতের নাগরিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তারিশি জৈন

in pic_133892ডেস্ক: গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ১৮ বিদেশির মধ্যে একমাত্র ভারতীয় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তারিশি জৈন।

দুই বাংলাদেশি বন্ধু ফারাজ আয়াজ হোসেইন [২০] ও অবিনতা কবিরসহ শুক্রবার রাতে ওই ক্যাফেটিতে নৈশভোজ সারতে গিয়েছিলেন তারিশি। তার বাবা সঞ্জীব জেইন বাংলাদেশে গত ২০ বছরে ধরে গার্মেন্টস ব্যবসা করছেন। এ সুবাদে তার ঢাকাতেই বসবাস। ঘটনার একদিন আগে সঞ্জীব জৈন স্ত্রী তুলিকা ও দুই সন্তানকে নিয়ে উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদে সংক্ষিপ্ত ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন কারণ এরপরই তারিশির ফের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে তারিশির বড় ভাই সঞ্চিত কানাডা থেকে ঘটনার একদিন আগে অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছায়। কিন্তু বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তারিশির আর ফিরোজাবাদে বাপ-দাদার ভিটেবাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠেনি। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ শনিবার ভোরের দিকে কোনো এক সময় তাকে গলা কেটে হত্যা করে বন্দুকধারীরা।

খুন হওয়ার পূর্বে শনিবার সকাল ৬টার ঠিক আগে বাবা সঞ্জীব জৈনকে ফোন করতে সক্ষম হয়েছিল তারিশি। ফোনে বাবাকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ও খুন হওয়ার আগ মুহূর্তে নিজের অবস্থা জানাতে পেরেছিল সে।

ঘটনার সময় হলি আর্টিসান বেকারির এক টয়লেটে লুকিয়ে তারিশি ও তার বন্ধুরা বাঁচার চেষ্টা করেছিল বলে তার চাচা রাকেশ মোহন জৈন জানান।

তারিশির ফোনকল উদ্ধৃত করে রাকেশ জৈন বলেন, ‘আমি [তারিশি] খুবই ভীত সন্ত্রস্ত এবং জীবিত বেরিয়ে আসতে পারবো কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তারা এখানকার প্রত্যেককে হত্যা করছে।’ ফোনে তারিশি আরো বলেছিলেন, ‘বন্ধুদের নিয়ে আমি একটি টয়লেটে লুকিয়ে আছি। আমাদের একে একে হত্যা করা হবে বলে মনে হচ্ছে।’ বাবাকে ফোন করার কিছু সময় পরই অর্থাৎ শনিবার ৬টার কিছু আগ থেকেই ১৯ বছর বয়সী তারিশির মোবাইল ফোনটিতে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না।

তারিশি জৈন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় অর্থনীতিতে স্নাতক পড়ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের মাধ্যমে ঢাকার একটি ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ পেয়েছিল সে। ঢাকায় বাবা-মার সঙ্গে থেকে শেষ ধাপে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে ছুটি কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়ে পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নিতে হলো তাকে।

এদিকে, তারিশিকে ভারতেই সমাহিত করা হবে বলে তার চাচা রাকেশ মোহন জৈন জানিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা তাকে সেই ভূমিতে সমাহিত করতে চাই না যেখানে তাকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। হিন্দু বলে সন্ত্রাসীরা তাকে খুন করলো।’ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়ার

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।