লটারির মাধ্যমে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রস্তাব

Image

অনলাইন ডেস্ক,১৫ নভেম্বর:
করোনা সংক্রমণের মুখে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। ভর্তি পরীক্ষা না প্রতিটি শ্রেণিতেই শূন্য আসনের বিপরীতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করে ভর্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এতে এ বছরের জন্য ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি ছাড়াও বিকল্প আরও দুটি প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, আসছে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্নিষ্টদের নিয়ে সভা করা হয়। সেখানে একাধিক প্রস্তাব এসেছিল। এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রস্তাব আমরা সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

বর্তমানে সারাদেশে ৬৮৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতে আছে ৪২টি। আর বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সারাদেশে আছে ১৯ হাজার ৪২১টি। বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে ১৬ হাজার ৭৭৫টি এমপিওভুক্ত, বাকি দুই হাজার ৬৪৬টি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে ভর্তি পরীক্ষা বাতিলে মাউশির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হলে সারাদেশের এসব বিদ্যালয়ে এ বছর কোনো ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

অবশ্য মিশনারি পরিচালিত কোনো কোনো বিদ্যালয় এবং কলেজ তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। সে সংখ্যা অবশ্য হাতেগোনা। বর্তমানে শুধু প্রথম শ্রেণির ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। নবম শ্রেণিতে জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। করোনার কারণে এ বছর জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক সমাপনী ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সে ধারাবাহিকতায় স্কুলগুলোর ভর্তি পরীক্ষাও বাতিলের বিষয়টি এবার আলোচনায় এলো।

মাউশি সূত্র জানায়, মাউশির পাঠানো প্রস্তাবে আরও দুটি বিকল্প চিন্তা রাখা হয়েছে। বাতিলের প্রস্তাব গৃহীত না হলে দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার ভেন্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে প্রতি বছর কমবেশি দুই হাজার পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। করোনা বাস্তবতা মাথায় রেখে একটি মাত্র বিদ্যালয়ে দুই হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা না নিয়ে ৪০০ জন করে অন্তত পাঁচটি ভেন্যুতে এ পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মাউশি। তৃতীয় বিকল্প হিসেবে মাউশি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাতে বর্তমানের ছোট প্রশ্ন (শর্ট কোয়েশ্চেন) পদ্ধতি বাতিল করে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) চালুরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নিজ বাসায় বসেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

মাউশির মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. এনামুল হক হাওলাদার সমকালকে বলেন, রাজধানীর সরকারি হাই স্কুলগুলো এবারও তিনটি পৃথক গুচ্ছে (ক্লাস্টার) ভাগ করা হচ্ছে। ক, খ ও গ এই তিন গুচ্ছে আগে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি গুচ্ছ থেকে একটি মাত্র স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পেত। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজ গুচ্ছের অন্তত পাঁচটি স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পাবে। এতে ভর্তি নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের দুশ্চিন্তা কমবে।

জানা গেছে, রাজধানীর ৪২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি নেই। এবার ঢাকায় ১৪টি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে। হাই স্কুলে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এক হাজার ২৬০টি আসন রয়েছে। লটারি বা ভর্তি পরীক্ষা যে মাধ্যমেই ভর্তি নেওয়া হোক, আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে ভর্তি ফরম ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে মাউশির। মাউশি জানায়, নতুন শিক্ষাবর্ষে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৬০ হাজার শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

অন্যদিকে, রাজধানীর বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি এরই মধ্যে ভর্তি ফরম ছাড়তে শুরু করেছে। বাকিগুলোও ভর্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অবশ্য, ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ মনে করেন এটি করলে ভালো হবে, কেউ আবার তা মনে করেন না।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।