মাদরাসা এমপিওভুক্তির নামে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা প্রতারক চক্র

madrasa_shiksha

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | ০৭ নভেম্বর, ২০২০
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাঠী আল আমিন মহিলা দাখিল মাদরাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির নামে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।

গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এ টাকা ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি গ্রহণ করেছে। অথচ এমপিওভুক্তি দূরের কথা, চক্রটি এ টাকা এখন ফেরতও দিচ্ছে না।

এরই মধ্যে টাকা ফেরত পাওয়ার লক্ষে মাদরাসা সুপার ও অন্য শিক্ষকরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযোগ করেছেন। সেখানে কোনো ফল না পেয়ে তারা সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য।

মাদরাসা সুপার গোলাম রসুল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের মোশাররফ হোসেন এ চক্রের প্রধান।

তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে তার বাবা মুজিবর রহমান ও বোন নাহার। তিনি জানান, মোশাররফ নিজেকে সরকারের কাছের লোক দাবি করে জানিয়েছেন, ‘তার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং অর্থ উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা দিলে এমপিওভুক্ত হবেন ওই মাদরাসার ১১ জন শিক্ষক।’

তিনি জানান, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে এ টাকা গ্রহণ করেছেন মোশাররফ ও তার বোন।

এখন টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানা টালবাহানা শুরু করেছেন। মোশাররফ নিজেকে কখনও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক, কখনও বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির পরিচালক এবং কখনও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব পরিচয় দিয়ে এ প্রতারণা চালিয়েছেন।

চুপড়িয়া গ্রামের মোশাররফের বাবা মুজিবর রহমান ঢাকা সচিবালয়ে চাকরি করেন এ মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

তবে চুপড়িয়া গ্রামের অধিবাসীরা জানান, মোশাররফ ঢাকায় সবজির ব্যবসা করেন। সচিবালয়ের আশপাশে তিনি থাকেন বলেও জানান তারা।

মাদ্রাসা সুপার গোলাম রসুল অভিযোগ করে বলেন, টাকা চাওয়ার পর তিনি তা ফেরত দেবেন বলেও কেবল তারিখ দিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৩০ অক্টোবর টাকা পরিশোধের সর্বশেষ দিন নির্ধারণ করেও মোশাররফের বাবা মুজিবর রহমান এখন গ্রাম থেকে পালিয়ে গেছেন। তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

অপরদিকে তার বোন নাহারও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা বলেন, মোশাররফ হোসেন নামের এক যুবক এখানে কিছুদিনের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করেছেন।

এরপর তিনি আর এখানে আসেন না। তবে এখানে বসে নিজের নানা পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এখন প্রতিদিন তার খোঁজে এ ইনস্টিটিউটে প্রতারিত লোকজন আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক মোশাররফ হোসেন মাদ্রাসার এমপিওভুক্তির নামে ২১ লাখ টাকা ছাড়াও চুপড়িয়া গ্রামের মো. আবু তাহেরকে বিদেশে পাঠানোর নামে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

মাধবকাঠীর আকলিমা খাতুন নামের এক নারীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন আরও দুই লাখ টাকা। এ ধরনের অনেকের কাছ থেকেই মোশাররফ প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন তা আর ফেরত দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানার জন্য মোশাররফের বাবা মুজিবর রহমানকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার বোন নাহারও গ্রামের বাইরে চলে গেছেন।

অপরদিকে মোশাররফের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খলিল সানা জানান, মোশাররফ সবার চোখে ধুলো দিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করেছেন।

তিনি বলেন, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রায় সবাই দরিদ্র। তারা তাদের এমপিওভুক্তির জন্য সহায়সম্পদ বিক্রি করে প্রতারক মোশাররফ হোসেনের হাতে তুলে দিয়েছেন।

তিনি অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে দরিদ্র শিক্ষকদের কাছ থেকে নেয়া টাকা আদায় এবং তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দাবি জানান।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।