মাউশিতে ১০ হাজার মামলার জট

Image

ডেস্ক,২ জানুয়ারী: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) মামলার সংখ্যা ১০ হাজার। যার মধ্যে ৮০ ভাগ মামলা এমপিও সংক্রান্ত। এছাড়াও পদোন্নতি, জনবল কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ, সাময়িক বহিষ্কার, নিয়োগ সংক্রান্ত এমনকি কর্মকর্তার স্ত্রী নির্যাতনের মামলাও রয়েছে। তবে নিজস্ব আইনজীবী না থাকা, লোকবল সঙ্কট এবং দীর্ঘসূত্রিতায় মামলার জটে যেন ডুবতে বসেছে অধিদপ্তর। বাংলাদেশ জার্নালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্যই।
তবে আশার কথা, সম্প্রতি কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ ও মামলা ডিজিটালভাবে হালনাগাদ করায় কাজের পদ্ধতি সহজতর করা হচ্ছে।

উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকেই মামলার কাজ পরিচালনা করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্নভাবেই মামলা নিয়ে কাজ করতে হয়। এরমধ্যে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট, রিট পিটিশন ছাড়াও অনেক মামলা নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট এমনকি সুপ্রিমকোর্টে পরিচালনা করা হয়। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও আবার আপীল বা রিভিউ করা করা হয়। এরপরই মামলার রায়ের বাস্তবায়ন করা হয়। যে কারণে মামলা দীর্ঘসূত্রিতা পায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, ২০০৪ সালে করা মামলা এখনো চলছে। ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার কোনো সুরাহা হয়নি।

এত মামলার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, সার্ভিসে অধিকার বঞ্চনার কারণেই মামলার সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও অনেক রকম মামলা অধিদপ্তরকে পরিচালনা করতে হয়। এরমধ্যে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা, রিটপিটিশন মামলা, আপীল মামলা, আদালত অবমাননার মামলা, বাস্তবায়ন মামলা, রিভিউ মামলা, এছাড়াও একটি মামলা তিনটি মামলায় রূপান্তরিত হয়।

প্রথমে থাকে রিট মামলা। রিটে রাষ্ট্রপক্ষ হেরে গেলে আপীল করা হয়। এরপর আপীল থেকে বাস্তবায়ন মামলা করা হয়।

মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হয়ে কাজ করে শিক্ষা ভবনের আইন শাখা। মাউশির আইন শাখার কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, একটি কোর্টেও রায় বাস্তবায়ন করতে গেলে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়। আমাদের নির্দেশ আছে; প্রতিটি মামলার আপীল ও লিভ টু আপীলসহ মামলার বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, আইন শাখা ডিজিটালাইজ করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য অধিদপ্তর ৫ জন আইনজীবী চেয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের জন্য ৩ জন ও মন্ত্রণালয়ের জন্য দু’জনকে অনুমোদন করেছে। খুব শিগগিরই প্যানেলের মাধ্যমে তিন আইনজীবীকে নিয়োগ দেবে মাউশি।

জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে মামলার তথ্য অনলাইনে হালনাগাদ করছে। এখন পর্যন্ত ২৮৮৪ মামলা অনলাইনে হালনাগাদ করা হয়েছে। এরফলে অনলাইনে মামলার অগ্রগতি ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে অনেক শিক্ষকের অভিযোগ আছে, মামলার সময়ক্ষেপণ ও রায় বাস্তবায়নে বিলম্ব করে আইন শাখা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন দু’জন কর্মকর্তা দিয়ে ১০ হাজার মামলা পরিচালনা অসম্ভব। একারণেই অনেক সময় মামলার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যায়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা (আইন) মো. আল-আমিন সরকার বলেন, নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতের মামলা পরিচালনা করা হয় আইন শাখা থেকে। এছাড়াও আমাদের উচ্চ আদালতে দু’জন আইন উপদেষ্টা আছেন। ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি সলিসিটার অফিস থেকে নিয়োজিত প্যানেল আইনজীবীরা। সেবা সহজ করতে কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কারণে মামলা অর্থাৎ ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে আমরা শুধুমাত্র মতামত দিয়ে থাকি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। তবে আইন শাখায় আমাদের আইনের লোক নেই। আইন শাখায় যে দু’জন আছেন তারা কলেজের শিক্ষক। তারউপর আইন জানে না। যতটুকু পারেন ততটুকুই করেন।

মামলার জট বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লিয়াকত আলী (আইন) বলেন, প্যানেলের মাধ্যমে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনজীবী নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। মামলার জন্য কেস ম্যানেজমেন্টসহ একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সচিব মো. মাহবুব হোসেনের নির্দেশে মামলার জট খুলতে কার্যক্রম হাতে নেয়া হচ্ছে। তবে একদিনে মামলার জট খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।