ডেস্ক, ৬ নভেম্বর: মঙ্গল গ্রহের অভিমুখে ভারতের প্রথম মহাকাশযান মঙ্গলবার সফলভাবে উৎক্ষেপন করা হয়েছে।
চেন্নাইয়ের কাছে শ্রীহরিকোটার মহাকাশকেন্দ্র থেকে দুপুরে নির্ধারিত সময়েই রওনা দিয়েছে ভারতের মার্স অরবাইটার মিশন।
মহাকাশ চর্চার ক্ষেত্রে ভারতের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প এটি।
পৃথিবী থেকে এর আগে যতগুলো মঙ্গল অভিযান হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম খরচের অভিযানও বলা হচ্ছে এই প্রকল্পকে।
কিন্তু ভারতে এখনো যেখানে কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে বাস করছে, সেখানে এই অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পৃথিবীর কক্ষপথে
শ্রীহরিকোটার যে সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে ভারতের একমাত্র রকেট লঞ্চিং প্যাড রয়েছে, সেখান থেকে এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়।
মহাকাশযানটি এখন পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করেছে এবং আগামী একমাস এটি এই কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে।
ভারতের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ এটি মঙ্গলে পৌঁছাবে।
সেখানে মহাকাশযানটি মঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করবে, খুঁজবে মিথেন গ্যাস বা বিভিন্ন খনিজের অস্তিত্ত্ব।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে রাধাকৃষ্ণন জানিয়েছেন, এই অভিযানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল মঙ্গলে মিথেন আছে কি না সেটা নিশ্চিতভাবে জানা।
আর মিথেন থাকলে তা কোনও ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায়, না কি জৈব প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট – সেটাও জানাতে পারবে মঙ্গলয়ান। মঙ্গলে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, তার উত্তর খোঁজার জন্য এগোনো যাবে আরও একধাপ।
প্রায় পনেরো মাস আগে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে এই মঙ্গল অভিযানের কথা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি তখন বলেছিলেন, মঙ্গলের কাছে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে আসবে ভারতের এই মহাকাশযান।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ায়, প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই, ভারতের জন্য সেটা ছিল বিরাট এক পদক্ষেপ।
মহাকাশ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন
এই প্রকল্পে ভারতের খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে চারশো কোটি রুপির মতো, যা নাসা বা চীনের অনুরূপ প্রকল্পের খরচের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। তারপরেও মঙ্গল অভিযান নিয়ে ভারতের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কিন্তু মিশ্র।
তারা কেউ বলছেন, মঙ্গলে ছাপ রাখার বদলে দেশের ভেতরে উন্নয়নে এই খরচটা করলেই অনেক ভাল হত।
কিন্তু পাশাপাশি এই মতটাও আছে যে দেশের গর্বের জন্য অনেক কিছু করতে হয় – সব কিছু টাকার অঙ্কে মাপা যায় না।
তবে ভারতের এই অভিযান পুরোপুরি সফল হবে কি না, তা জানার জন্য আরও অন্তত বছরখানেক অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
গত চার বছরের মধ্যেই চীন ও জাপানের মঙ্গল অভিযান ব্যর্থ হয়েছে – ভারতের মঙ্গলয়ানও যদি সেই রাস্তাতেই হাঁটে, তাহলে বিদেশে যেমন ভারতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে, তেমনি সমালোচনা তীব্র হবে দেশের ভেতরেও!
সুত্র: বিবিসি বাংলা
by