ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় ৭টি উপায় ও উপসর্গ

Image

ডেস্ক প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১:

করোনাভাইরাসের ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ রুখতে বাংলাদেশের সরকার যখন নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, ঠিক সে সময় দেশটিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হাবার খবর অনেকের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আক্রান্ত একজন বর্তমানে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনদিন আগে আরো এক ব্যক্তি বারডেম হাসপাতালে মারা গেছেন। চিকিৎসকরা সন্দেহ করছেন তিনিও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব চিকিৎসক ও অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কতজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হচ্ছে সেটির পরিসংখ্যান রাখা দরকার।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায় ও উপসর্গসমূহ প্রকাশ করেছে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?

এটি একটি ছত্রাক-জনিত রোগ। মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস যেহেতু দুর্বল থাকে, সেজন্য তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা করছেন ঢাকার বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। অধ্যাপক হোসেন বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যেহেতু সংক্রামক নয়, সেজন্য এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।

কী ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে:
•নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া
•চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া
•চোখের পাতা ঝুলে পড়া
•চোখে ঝাপসা দেখা, যার থেকে পরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়
•নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়া

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, যেসব জায়গায় ছত্রাকের উপস্থিতি আছে সেসব জায়গা এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।
চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব ছত্রাকের কারণে মিউকোরমাইকোসিস হয় সেটা পরিবেশে থাকা খুবই সাধারণ ঘটনা।
তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যাতে করে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এগুলো তুলে ধরা হলো।

১. যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, যেসব জায়গায় অনেক বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তাহলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব স্থাপনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। সিডিসি বলছে এসব জায়গা থেকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
৩. শরীরের চামড়ায় যাতে কোন ইনফেকশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোথাও কেটে গেলে কিংবা চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪. কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
৫. রোগীর স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। বারডেম হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক স্টেরয়েডের ব্যবহার ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে পারে। ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমতি হবার ঝুঁকি বেশি ধাকে।
৬. রোগীকে অক্সিজেন দেবার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
৭. মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, এসব সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলেই যে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ এড়ানো যাবে সেটি এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়।

সূত্র: বিবিসি

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।