নওগাঁ:: সাপাহার উপজেলার বিন্যাকুড়ী আদিবাসী গ্রাম। ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র ভূমি সাপাহারের শিরন্টি ইউনিয়নের অবহেলিত একটি জনপদ এটি। এ গ্রামে বসবাসরত পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট কোমল মতি শিশুদের স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে নিজস্ব ভাষায় পড়ালেখা শিখানো হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষিত আদিবাসী যুবকের সমন্বয়ে গঠিত বিন্যাকুড়ি আদিবাসী মিতালী সংঘের মহতী উদ্যোগে গত ২০০৯ সালে বিন্যাকুড়ী পশ্চিম পাড়ায় একটি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে আদিবাসী পাড়ায় বিন্যাকুড়ি আদিবাসী শিশু একাডেমি স্কুল স্থাপন করা হয়।
এখানে প্রতিদিন সকালে এলাকার শাঁওতাল ও উরাও সমপ্রদায়ের প্রায় ৫৬ জন শিশুকে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক স্কুলের পাঠ্য বইয়ের পড়া নিজস্ব ভাষায় সহজ পদ্ধতিতে শিখানো হয়।
সরেজমিনে জানা গেছে, আদিবাসী শিশু একাডেমির অদূরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গ্রামের আদিবাসীরা জানান, ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সেখানে পড়াশুনা করতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যায় পড়ে ফলে ক্লাশের বাঙালি শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকতে পারেনা।
এ সমস্যার কারনে প্রতি বছর শিক্ষা জীবন থেকে আদিবাসী শিশু ছাত্রছাত্রীরা ঝরে পড়ে। সৃষ্ট এ সমস্যা সমাধান কল্পে স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহায়তায় ওই আদিবাসী শিশু একাডেমি স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে বিনা পারিশ্রমিকে দুইজন শিক্ষিত আদিবাসী যুবক যুবতী প্রায় ৩ বছর ধরে নিজ ভাষায় বাংলা শেখার পাঠদান করে আসছে।
বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক অনন্ত কিসকু ও শিক্ষিকা শেফালী টুডু জানান, আদিবাসী শিশুরা নিজস্ব ভাষায় স্কুলের পড়া তৈরি করার ফলে বাংলা ভাষার পাঠ্যপুস্তক পড়তে তাদের আর কোন সমস্যায় পড়তে হয়না।
আদিবাসী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসামি দিনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি সমুন্নত রাখাসহ দেশের মূল স্রোতধারায় একত্রিতকরণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি তরান্বিত করা সম্ভব।
বিন্যাকুড়ী আদিবাসী শিশু একাডেমির এ মহত উদ্যোগ উপজেলার সব শিক্ষানুরাগীদের জন্য একটি মডেল বলেও অনেকে মনে করছেন। ওই গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দাদের প্রতি সপ্তাহের জমাকৃত মুষ্ঠির চাউল ও নির্ধারীত চাঁদার টাকায় ৫৬ জন ছাত্রছাত্রীর বই পুস্তক পোশাক, খাতা কলম, টিফিন ক্রয় করা হয়। বেড়া দিয়ে মাত্র দুটি কক্ষ তৈরি করে কোন মতে জোড়া তালি দিয়ে চলানো হচ্ছে বিদ্যালয়টির প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম।
প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র না থাকায় কোমল মতি আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের মেঝেতে খেজুর পাটি পেতে তার ওপর বসে প্রতিদিন লেখাপড়া করতে হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনূল ইসলাম সংবাদকে বলেন, নিজ উদ্যোগে শিক্ষা গ্রহণ এটি নিঃসন্দেহে একটি মহত ও অনেক বড় একটি উদ্যোগ। তিনি বলেন, সরকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নের বিষয়ে অনেক আন্তরিক।
by