দক্ষিণাঞ্চলে একের পর এক চেয়ারম্যান খুন,টার্গেট জনপ্রতিনিধিরা

ঝিনাইদহ, ২ নভেম্বর ২০১৩:গত দেড় যুগে এ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যানরা সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। একের পর এক হত্যায় এ অঞ্চলের ইউপি চেয়ারম্যানরা চরম আতঙ্কে ভুগছেন। ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একের পর এক খুন হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
গত সপ্তাহে ঝিনাইদহ ও যশোরে খুন হয়েছেন ২ জন চেয়ারম্যান।
111
গত ২৮ অক্টোবর সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহের হরিনাকু-ু উপজেলার দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল হোসেনকে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে দখলপুর বাজারে শত শত লোকের সামনে বোমা মেরে ও জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশ্যে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান মিন্টুকে সন্ত্রাসীরা ইউনিয়ন ভবনের সামনে গুলি করে হত্যা করে। নিহত ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টু ’৯০-এর দশকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

তবে গ্রাম্য কোন্দল, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, ক্যাইজা, হাটবাজার ও ঘাট ইজারা গ্রহণ, চিংড়ি ঘের দখল, চোরাচালান এবং চরমপন্থী দলের সঙ্গে সম্পর্ক ও বিরোধে জড়িয়ে পড়া এসব হত্যাকা-ের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

গত ১৬ জুন ঝিনাইদহ শহরের হামদহ আল-ফালাহ্ হাসপাতালের সামনে সন্ত্রাসীরা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে গুলি ও বোমা মেরে হত্যা করে।

গত ১৮ মে সকালে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আমদাবাদ স্কুলের সামনে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খান জাহিদ হাসান এবং তার মোটরসাইকেল চালক মুন্না শিকদারকে গুলি করে হত্যা করে।

এর দুই মাস আগে ২৪ মার্চ বিকালে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার পুটখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

এর তিনদিন আগে ২১ মার্চ রাতে সন্ত্রাসীরা মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. হামিদুর রহমান হেলালকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করে। পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সেতুও (১৭) সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন।

এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে দিবালোকে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আফজাল ও ভুট্টোকে পার্শ্ববর্তী কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের কাছে পদ্মানদীর মাঝ বরাবর খেয়া নৌকার ওপর দেড় শতাধিক যাত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুনিরা থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
চরম নিরাপত্তাহীনতায় অনেক ইউপি চেয়ারম্যান জীবন বাঁচাতে জেলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে এলাকার উন্নয়ন কাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন কাজের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকা-ের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়,  গ্রাম্য কোন্দল, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ, হাট-বাজার ও ঘাট ইজারা গ্রহণ, চিংড়ি ঘের দখল, চোরাচালান এবং চরমপন্থী দলের সঙ্গে সম্পর্ক ও বিরোধে জড়িয়ে পড়াই এসব হত্যাকা-ের কারণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাজিত প্রার্থী কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্যও ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানকে হত্যা করে।
অবিলম্বে এ অঞ্চলে যৌথবাহিনীর অভিযানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।