প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নতুন পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক,১৬ ফেব্রুয়ারী : প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নতুন পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রশ্নফাঁস নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে রুল জারির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত্র রুলের পর মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে মো. সোহরাব হোসাইন এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তনে আমি নিজে কাজ করছি। একটি উপায় আমরা অবশ্যই বের করবো এবং বিশেষজ্ঞদের এ কাজে সম্পৃক্ত করবো। নতুন পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যে পদ্ধতি নিয়ে জনমনে আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না।’
এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেওয়া হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব বলেন, ‘এমসিকিউর অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু ভালো উদ্যোগ সে বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। এই পদ্ধতিটি খুবই ঝামেলা করছে। এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমি মনে করি, প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে এমসিকিউ অনেকাংশে দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস কোথা থেকে হয় তার মূলে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। তদন্ত সংস্থার সদস্যরা সমস্যার মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা নিশ্চয়ই এর একটা সুরাহা বের করে ফেলবেন।’
সেসব বিষয়ে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এখনই বাতিল নয়, যাচাই-বাছাই কমিটি যে প্রতিবেদন দেবে, সেই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে আরও একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে যে সুপারিশ করবে, সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালতের রুল জারির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আদালতকে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। আমরা আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন করবো।
এছাড়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের জন্য প্রশ্ন প্রণয়নে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
প্রশ্নফাঁসের হোতাদের ধরতে এর মূলে পৌঁছানোর জন্য গোয়েন্দা বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মো. সোহরাব হোসাইন।
এর আগে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সাংবাদিকদের বলেন, আমি যেটি বিশ্বাস করি, যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, প্রশ্ন তৈরি হয় এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি, আমার মনে হয় এটা নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। নতুন করে যদি না ভাবি তাহলে শত শত বছরের প্রাচীন পদ্ধতি ডিজিটাল যুগে অচল হতে পারে’।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার মতো উপায় আছে জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রয়োগ করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ শিক্ষার্থী তো দু’চারজন না, লাখ লাখ, লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান, লাখ লাখ শিক্ষক, এদের মধ্য থেকে আমরা প্রযুক্তিগতভাবে এরকম ব্যবস্থা করতে পারি যে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাকটিক্যালি কারো পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করার কোনো সুযোগই থাকবে না। তবে ইন্টারনেট বন্ধ করা অথবা ফেসবুক বন্ধ করা সমাধান না’।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা যে কাউকে ট্রেস করতে পারি, কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখতে হবে প্রযুক্তিতে যে রকম সরাসরি চিহ্নিত করার সুযোগ আছে, ফাঁকি দেওয়ারও সুযোগ আছে। রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস থাকলে সহজে সনাক্ত করা যায়, কিন্তু
ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি বা সরাসরি যোগাযোগ না থাকায় প্রশ্ন ফাঁসকারীর তথ্য তাৎক্ষণিক না পাওয়ায় ক্ষতি হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা তিন দিক থেকে কাজ করছি। বিটিআরসি, আইসিটি বিভাগ এবং পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। আমরা এরইমধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যে অবস্থাটা যাচ্ছে এই অবস্থাটাকে যাতে প্রকৃত সমাধানের জায়গায়…এটা কেবল প্রশ্ন ফাঁসের নিরাপত্তার বিষয় নয়, বস্তুত পক্ষে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থাটাকে নিরাপদ করা।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।