উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি নিয়ে গেল বছর থেকে সরকার একটি নিয়মের মধ্যে এসেছে। সেই উদ্যোগের ফলে ভর্তিযুদ্ধ নামক বিষয়টির অবসান ঘটল। সাধুবাদ সরকারকে। শুরুর বছর খানিকটা ভালোভাবেই সমাধান হলো, কিন্তু এই বছর থেকে ভর্তি নিয়ে একটি চক্রের আস্ফালন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আস্থা রাখা যায় এমন গণমাধ্যমে গতদিন দেখলাম, বগুড়ায় একটি কলেজে তালা ঝুলিয়ে ছাত্র সংগঠনের নামধারী একটি গোষ্ঠী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি নিচ্ছেন। কলেজের ভর্তি ফি ছাড়াও সেই গোষ্ঠীকে পাঁচ-দশ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম মীমাংসা করতে হচ্ছে। অথচ সরকারিভাবে মেধা তালিকায় সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ তাদের ছিল। কিন্তু সেইসব তালিকাকে তুচ্ছ করে নিজস্ব একটি আইন বানিয়েছে সেই ছাত্রনেতা নামধারী গোষ্ঠী। সংবাদটি চোখে পড়ার আগে আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তার সন্তানের ভর্তির বিষয়ে। তার সন্তানও সব বিষয়ে আশি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। নিজ এলাকা ফেনীতে যে কলেজে লটারির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সেখানে ভর্তি হতে গেলে কথিত ছাত্রনেতারা ত্রিশ হাজার টাকা চেয়েছে। সবশেষে সাফ জানিয়ে দিল, পঁচিশ হাজার লাগবেই।
বোঝা যাচ্ছে, ভর্তি নিয়ে সারাদেশের জেলাগুলোতে এই কা- ঘটছে এবং প্রশাসনের নাকের ডগায়। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে মেরুদ-হীন বলার সুযোগ নেই; কারণ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রশ্ন হলো, রাজধানী বাদে দেশের অন্যান্য কলেজে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের এমন অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল? এটা কেবল অভিভাবকদের হেনস্তা নয়, শিক্ষার্থীদের চরমভাবে অপমান করা। অনেকে ভালো ফলাফল করেও যখন কাউকে টাকা দিয়ে খুশি করে কলেজে ভর্তি হতে হচ্ছে, তাতে সেই শিক্ষার্থীর মনের অবস্থা কেমন হয় তা ভাবলে বোধসম্পন্ন যে কারও বিবেকে ধাক্কা লাগার কথা। কিন্তু সেই ধাক্কাটি যদি সরকারের সংশ্লিষ্টদের বোধে না লাগে তাহলে অসুখ সারবে কী করে? এটা জেনে রাখা দরকার, অনেক সময় ছোটখাটো অসুখও অনেক বড় অসুখ ডেকে আনে। তাই ছোট অসুখ বলে অবহেলা করতে নেই, গুরুত্ব দিয়েই সেরে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
by