স্কুলের দ্বিগুণ পাঠ্যবই মাদরাসায়

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর জন্য সরকার নির্ধারিত বাধ্যতামূলক পাঠ্যবই তিনটি। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। অপর দিকে মাদরাসায় প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলের এ তিনটি পাঠ্যবই ছাড়াও আরো তিনটি বই পড়তে হচ্ছে। এগুলো হলো কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ, আকাইদ ও ফিকহ এবং আদ্ দুরুসুল আরাবিয়্যাহ্ বা আরবি শিক্ষা। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর দ্বিগুণ পাঠ্যবইয়ের বোঝা বইতে হয় একজন খুদে মাদরাসা শিক্ষার্থীকে।

তবে প্রথম শ্রেণীতে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের স্কুলের তুলনায় দ্বিগুণ বই পড়তে হলেও উপরের দিকে একটু কম। যেমন প্রাথমিকে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীতে সরকারি বাধ্যতামূলক বই মোট ছয়টি। অপর দিকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এসব শ্রেণীতে অধ্যয়ন করতে হয় আটটি করে বই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক বইগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, প্রাথমিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা। মাদরাসায় তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলের পাঁচটি বই বাধ্যতামূলক হিসেবে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়। এর সাথে রয়েছে মাদরাসার তিনটি বই যথা কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ, আকাইদ ও ফিকহ এবং আরবি শিক্ষা।

মাদরাসায় কুরআন, হাদিস, আকাইদ, ফিকহ প্রভৃতি ধর্মীয় বিষয়ের পাশপাশি একসময় বাংলা ইংরেজি গণিতও পড়ানো হতো স্বল্প পরিসরে। তবে সেসব বই রচিত হতো ধর্মীয় আঙ্গিকে। কিন্তু ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো হবে এক ও অভিন্ন। বর্তমানে স্কুলের যেসব বই মাদরাসায় বাধ্যতামূলক হিসেবে পাঠ্য করা হয়েছে সেসব বইয়ে পার্থক্য শুধু কিছু ছবিতে। যেমন স্কুলের বইয়ে ছেলেদের মাথায় টুপি নেই। মাদরাসার বইয়ে ছেলেদের মাথায় টুপি রয়েছে। এভাবে বইয়ের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে, নারী ও পুরুষের পোশাকের কিছু পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই।

২০১০ সালে পাস হওয়া শিক্ষানীতিতে মাদরাসা শিক্ষার কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে শিক্ষার অন্যান্য ধারার সাথে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ি পর্যায়ে নির্দিষ্ট শ্রেণীর শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নির্ধারিত বিষয়গুলো অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, সামাজিক পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করা হবে। দাখিলপর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় বাধ্যতামূলক থাকবে।

অন্যান্য ধারার মতো একই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির মাধ্যমে ইবতেদায়ি ও দাখিলপর্যায়ে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, তথ্যপ্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হবে।

মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসিতে এক সময় এক শ’ নম্বর করে বাংলা ও ইংরেজি ছিল। কিন্তু এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি হতে বাধা আরোপ করায় মাদরাসা বোর্ড এসএসসি ও এইসএসসিতে দুই শ’ নম্বর করে বাংলা ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করতে বাধ্য হয়। এভাবেও মাদরাসায় বইয়ের সংখ্যা বাড়ে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় মাদরাসায় প্রাথমিক স্তরে যেমন শ্রেণিভেদে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি বই পড়তে হয়, তেমনি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এইচএসসি পর্যন্ত মাদরাসার শিক্ষার্থীদের স্কুল ও কলেজের তুলনায় চার-পাঁচটি করে বই বেশি পড়তে হয় শ্রেণিভেদে। যেমন এসএসসিতে বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে ১১শ’ ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। অপর দিকে দাখিলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক হাজার চারশ’ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়।

মাদরাসার শিক্ষার্থীদের এ অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষ, মাদরাসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ফোরামসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে উত্থাপন করে আসছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণীর মাদরাসার ছয় থেকে সাত বছর বয়সী একটি শিশুকে বোর্ডের ছয়টি বাধ্যতামূলক বিষয় অধ্যয়ন খুবই পীড়াদায়ক হিসেবে মনে করেন অনেকে। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কিন্ডার গার্টেনে সরকার নির্ধারিত তিনটি বইয়ের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন বই পড়ানো হয়। তবে সাধারণত সে বইগলো হয় ছবি আঁকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক। কিন্তু মাদরাসায় প্রথম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক ছয়টি বইই বোর্ডের।

মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের নামে স্কুলের তথা সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন বই বাধ্যতামূলক করা, মাদরাসা শিক্ষার সংস্কারকরণ, মাদরাসায় ধর্মীয় বই কমিয়ে তার স্থলে সাধারণ শিক্ষার বই বাধ্যতামূলক করার নীতি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক এবং সমালোচনা চলে আসছে। এসব প্রেক্ষাপটে আলিয়া মাদরাসার ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অনেকে অনেক ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। অনেকের মতে মাদরাসা থেকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব কমিয়ে আনাই মূলত এসব সংস্কারের লক্ষ্য। অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন এক সময় সংস্কার করতে করতে নিউস্কিম মাদরাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলের পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। ফলে ১৯৫৭ সালে নিউস্কিম জুনিয়র ও হাই মাদরাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলে এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলোকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে রূপান্তর করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে আলিয়া মাদরাসায় সংস্কারের নামে যেভাবে সাধারণ শিক্ষার বিষয় বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে তাতে একদিন আলিয়া মাদরাসারও ভবিষ্যৎ নিউস্কিম মাদরাসার মতো হতে পারে। অনেক শিক্ষকের মতে এক দিকে আলিয়া মাদরাসার ধর্মীয় পার্থক্য কমে আসছে, অপর দিকে বইয়ের বোঝা বাড়ছে দিন দিন। এতে করে অভিভাবকরা আলিয়া মাদরাসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

তবে এর বিপরীত মত দিয়ে অনেক শিক্ষক বলেছেন, ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি মাদরাসায় স্কুলের সাধারণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকায় অনেকের আবার আগ্রহ বাড়ছে। তা ছাড়া অধিক বিষয় পড়ার কারণে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় বারবার মাদরাসার শিক্ষার্থীদের স্থান করে নেয়া তার প্রমাণ। মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মাদরাসার শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছেন।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এ সাফল্য সত্ত্বেও আলিয়া মাদরাসার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা দূর হচ্ছে না অনেকের। বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর সাইয়্যেদ কামালুদ্দিন জাফরী বলেন, মাদরাসায় যখন ১০০ নম্বরের বাংলা ও ইংরেজি পড়ানো হতো তখনো তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ভালো বিষয়ে চান্স পেত স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পেছনে ফেলে। তারা আগেও যোগ্য ছিল।

মাদরাসায় সাধারণ শিক্ষার অধিক বই পাঠ্য করা এবং মাদরাসার স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয় এটা তো শিক্ষার অন্যতম বিষয়। কিন্তু তা মানা হচ্ছে কই? আমি সাধারণ শিক্ষার বিষয়ের বিরোধিতা না করেই বলছি এগুলো আমরা পাঠ্য করতে চাই। কিন্তু সেটা অল্প অল্প করে ক্রমান্বয়ে হতে হবে। প্রথম শ্রেণীতে মাদরাসার তিনটি বই রয়েছে। তার সাথে স্কুলের তিনটি বই চাপিয়ে দেয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা শিশুদের জন্য মানসিক পীড়ার কারণ। এতে করে তারা ভেঙে পড়বে এবং মেধার বিকাশ হবে না। ফলে তারা ব্যর্থ হবে। মাদরাসার জন্য এর ফল ভালো হবে না।

তিনি বলেন, সমন্বয় করা উচিত চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করে। বিপরীতমুখী দুটি জিনিস জোর করে চাপিয়ে দেয়া সমন্বয় নয়। স্কুলের বই হুবহু চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এটা মেনে নেয়া যায় না। মাদরাসার বই মাদরাসার আঙ্গিকেই রচনা করা উচিত। কিন্তু তা না করে এখন আধুনিকায়নের নামে যা হচ্ছে তাতে সোনার পাথর বাটি হওয়ার অবস্থা হয়েছে।

মাদরাসার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রক্ষার প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, মাদরাসার বই পুরোপুরি ঠিক রেখে শিশুদের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার বিষয় সংযোজন করা দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতে ক্ষতির মুখে পড়বে মাদরাসা শিক্ষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ বলেন, মাদরাসায় স্কুলের বিষয় বাধ্যতামূলক করার পেছনে ধর্মের প্রভাব কমিয়ে আনার যে অভিযোগ এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে তার সাথে আমিও একমত। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যদি চায় বইয়ের বোঝা কমিয়ে আনবে সে ক্ষেত্রে তো তারা স্কুলের বই কমাতে পারবে না, কমাবে মাদরাসার বই।
অনেকের মতে স্কুলের এত বই পড়তে গিয়ে সাধারণভাবে তারা ধর্মীয় বিষয়ে আর আগের মতো মনোযোগী হতে পারবে না। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন চাপে পড়েছে তেমনি অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে শিক্ষকদেরও।

২০০৯ সালের খসড়া শিক্ষানীতি ও মাদরাসা শিক্ষা : ২০০৯ সালে খসড়া শিক্ষানীতিতে মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়নের নামে মাদরাসার ধর্মীয় বিষয় ব্যাপকভাবে বাদ দিয়ে তার স্থলে সাধারণ শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে নামেন সারা দেশের মাদরাসা শিক্ষকেরা।

মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কুরআন, হাদিস ও ফিকাহ বাধ্যতামূলক। খসড়ানীতিতে এসব বিষয় উঠিয়ে দিয়ে ৬০০ নম্বরের বাংলা, ইংরেজি , গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামলূক করা হয়। কুরআন ও তাজবিদ, আকাইদ ও ফিকাহ এবং আরবি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়।

তখন মাদরাসায় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৪০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। খসড়া নীতিতে প্রতি ক্লাসে ৩০০ নম্বর করে ইসলামি শিক্ষা কমিয়ে দেয়া হয়।

২০০৯ সালে যখন খসড়া শিক্ষানীতি প্রকাশ করা হয় তখন দাখিলে ৫০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক । খসড়া নীতিতে রাখা হয় ৩০০ নম্বর। আলিমে মানবিক বিভাগে ৭০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষা বর্তমানে বাধ্যতামূলক ছিল। খসড়া নীতিতে রাখা হয় মাত্র ২০০ নম্বর। আলিমে বিজ্ঞান বিভাগে ৪০০ নম্বরের ইসলাম ধর্ম রয়েছে বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে আলিম বিজ্ঞান বিভাগে বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে মাত্র ২০০ নম্বর।

মাদরাসায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২০০ নম্বরের আরবি পড়ানো হয়। খসড়া নীতিতে তা কমিয়ে ১০০ করা হয। মাদরাসায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক কুরআন, হাদিস ও ফিকাহ বাদ দিয়ে ৮০০ নম্বরের সাধারণ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে শিক্ষানীতিতে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, সাধারণ বিজ্ঞান, কর্মমুখী শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা।

মাদরাসায় তখন বাংলা, ইংরেজি এবং অন্যান্য যেসব সাধারণ বিষয় পড়ানো হতো তা ধর্মীয় শিক্ষার সাথে মিল রেখে প্রণীত। স্কুলের বাংলা বইয়ের সাথে মাদরাসার বাংলার পার্থক্য ছিল ।
২০১০ সালে পাস হওয়া শিক্ষানীতির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্কুল ও মাদরাসায় বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো হবে এক ও অভিন্ন।

এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের পর ২০১০ সালে চূড়ান্ত শিক্ষানীতি প্রকাশের পর মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ে রহস্য থেকে যায়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মাদরাসার বিভিন্ন বিষয়ে মান বণ্টন অধ্যায়টি না থাকায় বিতর্কিত বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা অস্পষ্ট থেকে যায়।

খসড়া প্রতিবেদনে মাদরাসার পাঠ্যসূচি থেকে কুরআন, হাদিস, ফিকহ প্রভৃতি বিষয় কমিয়ে তার স্থলে স্কুলের সাধারণ পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসলামি শিক্ষা কমানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু খসড়া প্রতিবেদনে স্কুলের যেসব সাধারণ বিষয় মাদরাসার সিলেবাসে বাধ্যতামূলক রাখার প্রস্তাব করা হয় সেগুলোর নাম চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাখা হয়েছে।

১৭৮১ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রতিষ্ঠা করে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা। এরপর ১৯১৪-১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করে নিউস্কিম মাদরাসা। এর অধীনে এক হাজার ৭৪টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা নিউস্কিম মাদরাসা নামে পরিচিত। অনেকের মতে এসব মাদরাসা সংস্কার করতে করতে এক সময় এমন অবস্থায় এসে দাঁড়ায় যে, সাধারণ স্কুল-কলেজের সাথে এসব মাদরাসার পাঠ্য বিষয়ের তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। ফলে জুনিয়র ও হাই মাদরাসাগুলোকে স্কুল এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট মাদরাসাকে এইচএসসি কলেজে পরিণত করা হয়। পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজ আজো তার সাক্ষ্য বহন করছে। এক সময় এর নাম ছিল ঢাকা হাই মাদরাসা। ১৮৭৪ সালে হাজী মুহম্মদ মুহসীন এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

মাদরাসায় অতিরিক্ত পাঠ্যবই নিয়ে শিশুদের কথা চিন্তা করে অনেকে যেমন মর্মাহত তেমনি অনেকে উদ্বিগ্ন মাদরাসার স্বাতন্ত্র্য এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে স্কুলের প্রায় সব বই হুবহু চাপিয়ে দেয়ার কারণে। নয়াদিগন্ত

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।