সাধারন শিক্ষকদের সাথে জাতীয়করন শিক্ষকদের মেলাবেন না

bcsনিজস্ব প্রতিবেদক: নিজেদেরকে মেধাবী উল্লেখ করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ব্যানারে কিছু শিক্ষক বলেছেন, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের সঙ্গে কিছুতেই জাতীয়করণ করা কলেজের সাধারণ শিক্ষদের সমন্বিত করা যাবে না।

রবিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন সমিতির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির মহাসচিব মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের সমন্বিত করে অভিন্ন জ্যেষ্ঠতার তালিকা করলে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন। শিক্ষায় কোয়ালিটির অভাব দেখা দিবে।’

‘কারণ জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকরা ইন্টারমিডিয়েট পড়ান। তাদেরকে অনার্স, মাস্টার্স পড়ানো কলেজে বদলি হয়ে আসার সুযোগ দিলে শিক্ষার মান পড়ে যাবে। তাই আমাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের মেলাবেন না। বিসিএস ক্যাডার সদস্যদের সকল সুবিধা অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের জন্য নতুন বিধিমলা তৈরি করতে হবে’ বলেন সেলিম।

তিনি বলেন, কলেজ জাতীয়করণ করার পিছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসহ অন্যান্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি হওয়ার সুযোগ দিলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনার্স, মাস্টার্স পড়ানো কলেজে চলে আসবেন।

সমিতির মহাসচিব মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করে প্রারম্ভিক, লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পর্যায়ক্রমিকভাবে ৪টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস ক্যাডার অফিসার পদে যোগদান করেন।

আর ক্যাডারগুলোর মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা হচ্ছে অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যডার। যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক গড়ে তোলার জন্য এ ক্যাডারের সৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে মেধাবী ও স্বপ্নবান তরুণরা এই ক্যাডারে প্রবেশ করে।

তিনি বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজের সাধারণ শিক্ষকরা যোগ্যতার দিক থেকে কিছুতেই তাদের সমতুল্য হতে পারেন না। তাদের (সাধারণ শিক্ষক) মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা অবশ্যই প্রশ্নের সম্মুখীন। কেননা তাদের অধিকাংশই একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। অনেকেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেই বাদ পড়েছেন।

এ জন্য বিসিএস ক্যাডার সদস্যদের সকল সুবিধা অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের জন্য পৃথক পরিচালনা, নিয়োগ, জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে শাহেদুল খবির বলেন, জাতীয়করণ কলেজের শিক্ষদের অন্য কোন কলেজে বদলি হয়ে আসার সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাদের চাকরি জাতীয়করণ করা কলেজেই সুনির্দিষ্ট হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজের শিক্ষকরা নন-ক্যাডার শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাদের চাকরি নতুন বিধিমালা তৈরি করে তার দ্বারা পরিচালিত হবে। কোনোভাবেই তারা বর্তমান ও ভবিষ্যত বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পারষ্পরিক জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, পদায়নসহ কোন সুযোগ সুবিধার অন্তরায় হবেন না।

শাহেদুল খবির জানান, অতীতে জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র নীতিমালা পদ ও স্বতন্ত্র জ্যেষ্ঠতা নীতিমালা তৈরি না করেই ক্যাডারপদে পদায়ন দেওয়া শুরু হয়। ফলে তাদের কারণে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষকরা ক্যাডারে ব্যাপকভাবে জ্যেষ্ঠতা হারাতে শুরু করেন। তাদেরকে সমন্বিত করে অভিন্ন জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করায় সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের পদোন্নতি অনেক পিছিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে বেসরকারি কলেজকে সরকারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কিছু কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দফায় আরও ২২২টি কলেজকে সরকারি করার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৩১৫টির মতো বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হওয়ার কথা। এসব কলেজে মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় আট হাজার।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।