সরকারি চাকরিজীবীদের ফেসবুক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ

ডেস্ক: ই১ন্টারনেটে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’ ব্যবহারেরর ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারেদের জন্য কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২৮ অক্টোবর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই বিধিনিষেধের কথা জানানো হয়। এটি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত অথবা পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়- এমন বিষয়ে লিখতে পারবেন না সরকারের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো ছবিও শেয়ার করা যাবে না। শুধু উদ্ভাবনমূলক ও সরকারি কাজের ইতিবাচক দিক নিয়ে লিখতে ও শেয়ার করতে পারবেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি একজন সরকারি কর্মকর্তা একটি ছবি পোস্ট করেন, যা তার পেশাগত অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চলতি মাসের বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকের পর ২৮ অক্টোবর জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনার আশংকা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারি কর্মকর্তার অবাধে এবং নিজ কর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে যথেচ্ছ আচরণ করার সুযোগ নেই। এজন্য যে কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যবহার কাম্য।’

বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মাঠপর্যায়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা ফেসবুকে একান্ত ব্যক্তিগত এবং নিজ কর্মের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বিষয় শেয়ার করছেন। প্রশাসনের ভাবমূর্তির সঙ্গে এসব বিষয় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদ্ভাবনমূলক, সরকারি কাজের ইতিবাচক দিক, যা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করবে এমন সব বিষয় ফেসবুকে শেয়ার করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা আবশ্যক।’

তবে এ আদেশ সরকারের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভের। নাম প্রকাশ না করে তাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ‘পেশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি? ফেসবুকের হেডকোয়ার্টার এখন মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়…. ষড়যন্ত্র প্রতিবন্ধীদের জয় হোক…..’ শিরোনামে কর্মকর্তাদের একটি ফেসবুক সাইটে আদেশের কপি পোস্ট করেছেন একজন কর্মকর্তা।

এর প্রতিক্রিয়ায় অপর একজন কর্মকর্তা লিখেছেন- ‘মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের চাকরির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এবং চাকরির নিয়ম পরিপন্থী হয়, কোনো দফতর, অধিদফতরের সহিত মতামত নেওয়া হয়নি এবং যেটা সাংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে শুধু প্রশাসন ক্যাডারদের একক সুবিধা দেওয়ার জন্য যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এ ধরনের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত কোনোকালে, কোনোক্রমে কেউ মেনে নিতে পারে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটার কোনো মানে হয় না। আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করি। সেসব বিষয় লেখা যাবে না, শুধু লিখতে হবে সরকারের ইতিবাচক কথা। কর্মকর্তাদের ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের উৎসাহিত নির্দেশনায় আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ফেসবুকের মাধ্যমে নানা ধরনের জটিলতা ও সমস্যা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের নজরে আনার চেষ্টা করেছে। এটার কিছু ফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ ধরনের নির্দেশনার কারণে অনেকে এ আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

তবে ভিন্নমত পোষণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনোভেটিভ বিষয়গুলো শেয়ার করতে বলায় অনেকে তাতে নিজেদের গোষ্ঠীগত, ব্যক্তিগত, কোনো কোনো সময় সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক বিষয়েও মতামত দিয়ে থাকেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সোজাসাপটা বলতে হলে ফেসবুক এখন আন্দোলনের হাতিয়ার হয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।