সঙ্কটের মুখে ফারমার্স ব্যাংক ছাড়লেন মখা আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট সঙ্কটের মধ্যেই চাপের মুখে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পাশাপাশি অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীও পদত্যাগ করেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়।

বেসরকারি এই ব্যাংকটির এমডিকে অপসারণের নোটিস দেওয়ার পর সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের খবর জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের পদত্যাগপত্র পরিচালনা পর্ষদ গ্রহণ করেছে। নতুন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ। একইসঙ্গে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি পুনর্গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকটিতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টা, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের তালিকা জমা দিলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

পুনর্গঠিত পর্ষদ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকটির উপর ‘নজরদারি অব্যাহত’ থাকছে।

বেশ কিছু আমানতকারীর ব্যাংকটি থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টায় সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চাঁদপুরের সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন আলমগীর বর্তমান সংসদে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংকটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২০১৩ সালে অনুমোদন পেয়েছিল।

ব্যাংকটিতে অনিয়ম ধরা পড়ার পর তখন বেসরকারি এই ব্যাংকটিতে কড়া নজরদারিতে আনতে পর্যবেক্ষক বসিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক যদিও পরে তা আদালতে আটকে যায়।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে ফারমার্স ব্যাংককে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ফারমার্স ব্যাংক সাধারণ আমানতকারী এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উচ্চসুদে অর্থ নিয়ে চলছে। দায় পরিশোধের সক্ষমতাও নেই ব্যাংকটির। এর ফলে ব্যাংকটি সমগ্র আর্থিক খাতে ‘সিস্টেমেটিক রিস্ক’ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা না মেনে ফারমার্স ব্যাংকের নতুন ঋণ দেওয়ার বিষয়টিও প্রকাশ পায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে।

অন্যদিকে ব্যাংকটির কলমানি ঋণের পরিমাণ ১৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ক্রয়কৃত সরকারি সিকিউরিটিজের (বিল ও বন্ড) পরিমাণ ১ হাজার ৯ কোটি টাকা। ‘অর্থাৎ ব্যাংকটির দায় পরিশোধের সক্ষমতা নেই,’ বলা হয় প্রতিবেদনে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।