আগে যেখানে পাস করলে দেখতে ছুটে যেতো গ্রামবাসী,আর এখন ফেল করলে দেখতে যায় গ্রামবাসী।
এস কে দাসঃ “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড”।যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত,সে জাতি তত বেশী উন্নত।
আর তাই শিক্ষা গ্রহনের জন্য আমাদের ছুটতে হয় শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর দ্বারে দ্বারে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এখন বিপুল পরিবর্তন।আগে যেখানে পাস করলে দেখতে ছুটে যেতো গ্রামবাসী,আর এখন পাস করাটা পান্থা ভাতের মত হয়ে গেছে।এখন ফেল করলে দেখতে যায় গ্রামবাসী।
মেধা আর পুঁথিগত বিদ্যা এক নয়।সফলতা পুঁথির মধ্যে লেখা থাকে না। তাই বলে পুঁথি পড়তে হবে না এমন টা ও নয়!
জানার জন্য,শিখার জন্য পড়তে হবে।এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন হবে তোমার রেজাল্ট? ও বললো টেনশনে আছি,এ প্লাস না পেলে মুখ দেখাবো কি করে?
আমি হতবাক হয়ে গেলাম।জিপিএ ফাইভ না পেলে তার প্রেসটিজ পামছার হয়ে যাবে। তার মানে দাড়ায় সে জানার জন্য নয়,পড়ছে জিপিএ ফাইভ এর জন্য।
আবার দেখলাম টেষ্টে পাস করে ও কাঁদছে শিক্ষার্থী।কারন হিসাবে আশানুরুপ ফল হয়নি! এখন প্রশ্ন শুধু মুখস্ত করে পরীক্ষা দিলে জিপিএ ফাইভ কেনো লেটার মার্কস ও পাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানর্জন করা সম্ভব নয়।
আমাদের মানুষিকতা একটু ব্যতিক্রম।আমরা ভাবি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলেই ভাল ছাত্র/ছাত্রী হওয়া যায়।জীবনে বড় চাকরি পাওয়া যায়,কোটিপতি হওয়া যায়,মান সম্মান বৃদ্ধি পায়।এগুলো দাম্ভিকতা ছাড়া কিছু নয়।
“পৃথিবীতে সকলের মেধা শক্তি এক নয়।কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নয়।সবাই সব বিষয় বিজ্ঞ ও নয়।ধরুন একই ক্লাসে কেউ গনিতে ভাল,কেউ ইংরেজি,কেউ সাধারন জ্ঞান।আবার কেউ ভাল ক্রিকেট খেলায়,কেউ ফুটবল,কেউ আবার গনিত-ইংরেজির চেয়ে ব্যবহারিক বিদ্যা অনেক প্রখর”।
এখন প্রশ্ন হলো কজনই বা মেধার মূল্যায়ন বুঝে?
ছোটবেলা যখন বাড়ি থেকে জিজ্ঞেস করতো,বড় হয়ে কি হতে চাও? বলতাম ডাঃ, ইঞ্জেঃ। আসলেই কি সকলের ইহা হয়ে উঠা সম্ভব হয়? না, সন্তান কোন দিকটায় পারদর্শী আমরা এর খবর না নিয়ে জিপিএ ফাইভ আর বইয়ের বোঝা মাথায় চাপিয়ে দিতে ব্যস্থ থাকি।
যে ছেলেটা বইয়ের সহজতম অংক কষতে না জানলে ও এইচ-টি,এম,এল – সি,এস,এস এর কোড দিয়ে ওয়েভসাইট ডেভোলাপ করতে পারে, তবে কি আপনি তাকে অশিক্ষিত বলবেন?
যে ছেলেটা বইয়ের সহজ ইংলিশটা না জানলে ও ঠিকই ডিউজ বলটা দিয়ে ১৯ উইকেট নিয়ে দেশকে সম্মান এনে দিতে পারে তাকে অশিক্ষিত বলবেন?
আমাদের চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠান গুলো ও কাগজের সার্টিফিকেট দেখে মেধার মূল্যয়ন করে। যা কখনোই আমার কাছে বোধগম্য নয়। সার্টিফিকেটে মেধা কিংবা যোগ্যতা লেখা থাকে না। অনেক সময় সন্তানকে বেশী পড়ালেখার চাপ দিলে সে মানুষিক ভাবে হেনস্ত হয়ে পড়ে। সারাদিন বইয়ে বোঝা আর বাবা মায়ের মুখ উজ্জল করতে গিয়ে সামাজিকতা থেকে ও দূরে সরে যাচ্ছে যুব সমাজ।
সরকার বইয়ের বোঝা কমিয়ে, সৃজনশীলতার চর্চা করার ব্যবস্থা করে দিলে ও কোচিং আর গাইড বইয়ের কবল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেন না কোমলমতী শিশুরা। বেশী শিখানোর জন্য অল্প বয়সে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বোঝা! সমাজের সাথে না মেশার ফলে এরা খুব সহজেই ব্রেন ওয়াসে বিশ্বস্ত হয়ে পরে বলে মনে হচ্ছে।গতিক মনভাব,মানুষের প্রতি ভালবাসা মমত্ববোধ ও কমে যাচ্ছে তরুন প্রজন্মের মাঝে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ থেকে উত্তোরনের একটা ই উপায়। তা হলো আপনার সন্তান কি হতে চায় সেদিকে নজর দিন। আপনার স্বপ্ন সত্যি করতে সন্তানকে মানুষিক বেকারগ্রস্থ করে গড়ে তুলবেন না।
“কিছুদিন আগে ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। কিছু কোমলমতী শিশুকে দেখলাম বই নিয়ে ছুটছে তখন প্রায় ছয়টা বাজে।সেই শিশুকে দেখলাম বিকেল ৪ টার পরে বাড়ি ফিরছে”!
এটা কেমন শিক্ষার্জন ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবু শহরের থেকে ভালো,ওদের তো নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই। কয়টা শিশু শহর থেকে গ্রামে এসেছে,ধান ক্ষেতে ধান দেখে ওরা জিজ্ঞেস করে এগুলো কি? অতচ এই ধান থেকে যে চাল হয়, সেই চালের ভাত খেয়ে বেঁচে আছে তারা।
এখন আপনি ভাবুন এ সন্তানকে কি শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন।জিপিএ ফাইভ পাওয়া নাকি সুশিক্ষিত নাগরিক করা। বলি কি জোর করে যেমন ভালবাসা হয় না,তেমনি অন্যের প্রতিভাকে নিজের স্বার্থে জলাঞ্জলি দিবেন না। সন্তানকে তার ইচ্ছে মতই বড় হতে দিন।
by