বিশেষ প্রতিবেদক: বিশেষ কমিটির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্যরা দায়িত্বে ফিরতে পারছেন না। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষসহ তিনটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এর মাধ্যমে এমপিরা আর বিশেষ কমিটির মাধ্যমে আর সভাপতি হতে পারবেন না। যিনিই সভাপতি হোন না কেন, তাকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সুযোগ অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ভিকারুন্নিছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিশেষ ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল হয়ে গেল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
এর আগে চলতি বছর ১ জুন হাইকোর্ট মনোনয়নের মাধ্যমে সভাপতি হওয়া সংক্রান্ত আইনের ধারা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। জুলাই মাসে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ, ভিকারুন্নিছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাশেদ খান মেনন লিভ টু আপিল করেন। আজ আপিল বিভাগ তিনটি আবেদনেই খারিজ করে দেন।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৫ ধারা অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ৪টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে থাকতে পারবেন। আর ৫০ ধারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন না দিয়ে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে গঠনের বিধান রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালার ৫ ও ৫০ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদন দায়ের করেন ইউনুছ আলী আকন্দ। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়ন করবেন। কিন্তু তাদের এসব প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ দুটি ধারা স্ংবিধানের ৭, ২৬, ২৭, ২৮, ৩১, ৬৫ এর সংঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে তা বাতিল চাওয়া হয়।
সেই রিটের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের থাকা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৩ এপ্রিল রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নির্বাচন ছাড়া কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এই ধারা দুটি ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
শিক্ষা সচিব, ঢাকা শিক্ষা বোডের চেয়ারম্যান, কলেজ শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক, ভিকারুন্নিছা স্কুলের অধ্যক্ষ ও সভাপতি রাশেদ খান মেননকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
সেই রুল শুনানি শেষে গত ১ জুন হাইকোর্ট এমপিদের বিশেষ কমিটির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হওয়া সংক্রান্ত আইনের ধারা বাতিল অবৈধ ঘোষণা করেন। আজ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রাখল।
by