লাঞ্ছিত সেই শিক্ষকের শারীরিক অবস্থার অবনতি

ডেস্ক: ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ এনে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরে ওঠবস করিয়ে লাঞ্ছনার শিকার নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক বছর দুয়েক আগে মস্তিষ্কের রক্ষক্ষরণের শিকার হন। এতদিন ভালোই ছিলেন। দুইদিন ধরে তিনি মাথার পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। সেটি মস্তিষ্কের রক্ষক্ষরণের কারণে ঘটছে কি না তা দেখা প্রয়োজন।

এ ছাড়া পারিপার্শ্বিক চাপের মধ্যে থাকায় তিনি মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান শফিউল আলম। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রধান শিক্ষকের চিকিৎসা চলছে।

শফিউল আলম আরো জানান, প্রধান শিক্ষক যে আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তা এখন তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে কিছু প্রভাব এখনো আছে। উনার ডায়াবেটিস ও মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের সমস্যা ছিল। যেহেতু মাথা ব্যথার সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে, তাই উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।

এদিকে আজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তিনি শুয়ে আছেন। স্বাস্থ্যের খোঁজখবর জানতে চাইলে কষ্টের সুরে তিনি বলেন, ভালো নেই। মাথার পেছনে বাম দিকে ব্যথা। অন্যায়ভাবে তাঁর ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেটিরও ন্যায়বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেন।

গত ১৩ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুল মাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁরা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়।

সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেন।

কান ধরে ওঠবসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এর পর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।

গত সোমবার শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল বুধবার হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আগামী তিনদিনের মধ্যে জানাতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এর ভিত্তিতে কমিটি তাঁকে স্বপদে বহালের সুপারিশ করেছে। তদন্ত কমিটি স্কুলের আগের কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।