লতিফ সিদ্দিকী ফিরেছেন

বিমানবন্দর প্রতিনিধি : ইসলাম ও হজ নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। রবিবার রাত ৮টা ২১ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ইমিগ্রেশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে কিছুক্ষণ ঘিরে রাখলেও ৯টা ২৬ মিনিটে ডমেস্টিক এয়ারপোর্টের টার্মিনাল দিয়ে একটি সিলভার কালারের প্রাইভেট গাড়িযোগে (ঢাকা মেট্রো ৩৫-৭৭৮৫) তিনি অজ্ঞাত স্থানের দিকে চলে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোথায় অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিমানবন্দর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বিমানবন্দর ছাড়েন বলে গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কৃত এই নেতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত এসে কিছু দিন অবস্থান করেন। গতকাল তিনি কলকাতা থেকে দেশে ফিরলেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলাম ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত লতিফ সিদ্দিকীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছে। নইলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।
তিনি বলেন, হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এ হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নেই। কোনো প্রডাকশন নে1414168314ই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।
তার এসব বক্তব্য তাত্ক্ষণিকভাবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে আলোচনার ঝড় তোলে। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই’ কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।’
গত ২৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘোষণা দেন, মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হবেন। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন।
উল্লেখ্য, লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দেশের নানা জেলায় মোট ১৭টি মামলা হয়েছে এবং অধিকাংশ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২৮ অক্টোবর আরও বলেন, ‘আদালত থেকে যে নির্দেশনা এসেছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করব।’
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরবর্তী সময় তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রশ্নই আসে না। বিবিসির সংবাদে বলা হয়, হজ নিয়ে মন্তব্য করে তোপের মুখে থাকা বাংলাদেশের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি তার মন্তব্যে অনড়। তবে শুধু তার দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেই তিনি তার সম্মানে মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মেক্সিকো থেকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, একজন স্বাধীন ও আধুনিক মানুষ হিসেবেই তিনি হজ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যা রেকর্ড করা আছে। সেটা ঠিকই আছে। আমি ওই কথার ১০০ ভাগ দায়িত্ব নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭৭ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
ষাটের দশকে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দিনগুলোতে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য লতিফ সিদ্দিকীকে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।