রিয়ালের কোচ হওয়ায় লোপেতেগিকে বরখাস্ত করেছে স্পেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে হুলেন লোপেতেগির নামটা যখন ঘোষণা দেওয়া হলো, চমকে গিয়েছেন সবাই। লোপেতেগি না স্পেনের কোচ, আর তিন দিন পরে পর্তুগালের বিপক্ষে ডাগ আউটে থাকার কথা তাঁর! ‘থাকার কথা’ শব্দটা ব্যবহার করতে হচ্ছে রুবিয়ালেসের কারণে। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি যে বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে এমন ঘোষণাকে বিশ্বাসভঙ্গ হিসেবে দেখছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ক্ষুব্ধ-বিরক্ত রুবিয়ালেসের মন্তব্য, ‘এটা কথা বলার সময় নয়। তবে জাতীয় দলের জন্য ভালো হয়, এমন সিদ্ধান্তই নেব।’ সভাপতির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এমন সময়ে কোচ ছাঁটাই না করতেই বলেছেন। কিন্তু রুবিয়ালেসকে থামানো যায়নি। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে রুবিয়ালেস লোপেতেগিকে বরখাস্ত করেছেন।

নতুন কোচ নিয়োগ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে রুবিয়ালেস জানিয়েছেন, ‘লোপেতেগিকে ছাড়াই এগিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা যতটা কম পরিবর্তন করা সম্ভব তাই করব।’ এ ব্যাপারে ফুটবলারদের কাছেই বাড়তি দাবি ফেডারেশন সভাপতির, ‘আমি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত করছি নতুন কোচের অধীনে জাতীয় দলকে যতটা সম্ভব এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চটাই দেবে ফুটবলাররা। আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’ তবে ফুটবলাররা কতটা দিতে পারবেন সেটাই প্রশ্ন। লোপেতেগি রিয়ালের কোচ হওয়ার পরও খেলোয়াড়রা স্পেনের কোচ হিসেবে তাঁকেই রেখে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু রুবিয়ালেস রাজি হননি।

বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চের ঠিক আগে জাতীয় দলের কোচ যখন কোনো ক্লাব দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, তখন খেপারই কথা দেশের ফুটবল কর্তাদের। রিয়াল মাদ্রিদও কেন এ খবরটা এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে গেল—এ নিয়েও চলছে বিতর্ক। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, স্পেন দলের মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের (কারভাহাল, রামোস, ইস্কো, ভাসকেজ, অ্যাসেনসিও ও নাচো) কোচ নিয়োগের সংবাদ দেওয়া হয়েছিল। সেটা স্পেন স্কোয়াডের অন্য এক খেলোয়াড়ও জেনে গিয়েছিলেন। তাই তাড়াহুড়া করে কোচ নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াল।

কেন দেশের ফেডারেশনের ক্ষোভ জাগানোর সম্ভাবনা থাকা সত্তেও লোপেতেগিকে নিয়োগ দিল রিয়াল? কোচ হিসেবে কখনই জিদান, মরিনহো, গার্দিওলা, কন্তে, ক্লপ বা ওয়েঙ্গারের মতো আকর্ষণীয় নাম নন লোপেতেগি। কিন্তু এই লোপেতেগির অধীনেই নিজেদের আকর্ষণীয় ফুটবল খেলার পরিচয়টাকে আবারও নতুন করে ফিরে পেয়েছে স্পেন। ২০১৬ ইউরোতে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়া স্পেন এই লোপেতেগির অধীনেই আবারও পরাশক্তি হিসেবে বিশ্ব ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করেছে।

রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের সবচেয়ে আশার বিষয় হলো রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান খেলোয়াড়ের একটি বড় অংশ, যেমন কারভাহাল, রামোস, ইস্কো, ভাসকেজ, অ্যাসেনসিও, ক্যাসেমিরো, নাচো, ভ্যায়েহো—প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই ক্যারিয়ারের কোনো না কোনো সময়ে কোচিং করিয়েছেন লোপেতেগি। তাই এঁদের সবার সম্পর্কেই ভালো ধারণা আছে তাঁর। রামোস আর ক্যাসেমিরো ছাড়া এঁদের প্রত্যেকেই স্পেনের অনূর্ধ্ব-১৯ আর অনূর্ধ্ব-২১ দলে ছিলেন, যে দলগুলো ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরো আর ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোতে এই লোপেতেগির অধীনেই শিরোপা লাভ করেছিল।

২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোর ম্যানেজার ছিলেন এই লোপেতেগি, তখন এক বছরের ধারে রিয়াল থেকে ক্যাসেমিরোকে নিয়ে আসেন, ওই এক বছরেই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে গড়ে তোলেন ক্যাসেমিরো। তরুণ ফুটবলারদের গড়ে তোলার ব্যাপারেও যে বেশ সিদ্ধহস্ত লোপেতেগি—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পর্তুগিজ মিডফিল্ডার রুবেন নেভেসকে ১৭ বছর বয়সেই পোর্তোর অধিনায়কত্ব এই লোপেতেগিই দিয়েছিলেন।

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা—উভয় দলের হয়েই খেলা গুটিকয়েক খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন এই লোপেতেগি। খেলোয়াড়ি জীবনে গোলরক্ষক ছিলেন, মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছেন রিয়ালের হয়ে। পরে যদিও বার্সেলোনার হয়ে ৫ ম্যাচ খেলেছেন। পরে রিয়াল মাদ্রিদের যুবদলের হয়েও কোচিং করিয়েছেন তিনি।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।