যে ভাবে র‌্যাপিড্লি সড়ক দূর্ঘটনা কমানো সম্ভব

মোঃ সালাউদ্দিন, পুলিশ পরিদর্road accidentশক, শহর ও যানবাহন, ঝিনাইদহঃ সড়ক দূর্ঘটনা! সড়ক দূর্ঘটনা! সড়ক দূর্ঘটনা! এ নামটা যেন নিত্য দিনের ঘটনা। এটা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এতে প্রতিদিন ঝরে যাচ্ছে বহু তাঁজা প্রান। থমকে যাচ্ছে বহু পরিবার। পঙ্গু হাসপাতালে গেলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সহজেই উপলব্দি করা যায়। সড়ক দূর্ঘটনায় বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই সমাজের সচেতন মানুষ এর থেকে পরিত্রানের পথ খোজার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন ভাবেই যেন এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত আমরা সড়ক দূর্ঘটনায় অনেক ইনটেলেকচুয়াল ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো, কেন এত সড়ক দূর্ঘটনা! এর প্রতিকার কি কোন ভাবেই সম্ভব নয়? এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৪ সালে সারা দেশে ৫,৯২৮টি সড়ক দূর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৮,৫৮৯ জন নিহত এবং আহত হয়েছে ১৭,৫২৩ জন। মহাসড়কগুলেতে এই সড়ক দূর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে। এত আহত ও নিহত লোকের মধ্যে একটা বড় অংশ পথচারী। আমার ভাবতে অবাক লাগে, আমরা অনেক শিক্ষিত লোকও ট্রাফিক আইনের পথ চলার নিয়মটা জানি না। আর গ্রামের নিরক্ষর লেকের কথাতো বাদই দিলাম। কারন তারাতো রাস্তা পারাপার হয় রাস্তার একদিকে তাকিয়ে অথবা দৌড় দিয়ে। রাস্তা পারাপার হওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে ডানে তাকাতে হবে, তারপর বামে এবং সর্বশেষ ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হতে হলে আপনাকে ডানে তাকাতে হবে কারন ডান দিকের গাড়ী আপনাকে প্রথমে আঘাত করবে। এরপর বামে তাকাতে হবে কারন উল্টা দিক থেকে যে কোন সময় গাড়ী আসতে পারে। সর্বশেষ ডানে তাকাতে হবে কারন এই সময়ের মধ্যে যে কোন গাড়ী চলে আসতে পারে। পথচারী হিসাবে সড়ক দিয়ে হাটার নিয়ম হলো- সব সময় রাস্তার ডান পার্শ্ব দিয়ে হাটতে হবে। কারন আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ী বাম পার্শ্ব দিয়ে চলে। পথচারীও যদি বাম পার্শ্ব দিয়ে চলে তাহলে পিছন থেকে আগত গাড়ীগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঘাত করতে পারে। আপনি ডান পার্শ্ব দিয়ে হাটলে আপনার সামনের গাড়ীগুলো দেখে নির্বিঘেœ রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে পথচারীকে পিছন থেকে কোন গাড়ী আঘাত করার সম্ভাবনা থাকে না। এই পথ চলার নিয়ম না জানার কারনে প্রতি বছর অনেকেই দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পথ চলার নিয়ম প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ওয়ান থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সড়ক দূর্ঘটনার অনেক কারন রয়েছে। যেমন চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালনা, রোড সাইন না বুঝে যেখানে সেখানে ওভারটেক করা, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাস্তার ত্র“টি, ত্র“টি যুক্ত গাড়ী ব্যবহার, পথচারীদের পথ চলার নিয়ম না জানা, মহাসড়কে নছিমন, করিমন ইঞ্জিন চালিত গাড়ী চালনা, বিশ্রাম ব্যতীত একটানা গাড়ী চালনা, গাড়ীর ইঞ্জিন এবং চাকা চেক না করে গাড়ী বের করা। রাত্রিকালীন সময়ে বড় গাড়ীগুলো নিয়ম না মেনে হাইভীম ব্যবহার করা, হাইওয়েতে বাজার স্থাপন, রাস্তার উপর বালু বা মাটি রাখা, গাড়ী চালনার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেলপার দিয়ে গাড়ী চালনা, গাড়ীর মালিকেরা চালকদের প্রতি উদাসীনতা, ঝুকি পূর্ণভাবে লোক বা মাল বহন করা, সঠিক পদ্ধতিতে লাইসেন্স গ্রহণ না করা, যাত্রীদের চালককে দ্রুতগতিতে গাড়ী চালনায় উৎসাহীত করা সহ আরো কিছু কারনে সড়ক দূর্ঘটনা সংঘটিত হয়। সড়ক দূর্ঘটনার মূল কারন চালক নিজে। ত্র“টিযুক্ত গাড়ীর কারনে দূর্ঘটনা ঘটলেও এর জন্য দায়ী ড্রাইভার। কারন গাড়ীর সবকিছু ঠিক না থাকলে একজন ড্রাইভারের সড়কে গাড়ী বের করা উচিৎ নয়। বর্তমানে বেশী বেপরোয়া দুর পাল্লার বাসের চালকেরা। ট্রাকগুলোও বেপরোয়া, তবে লোডেড অবস্থায় চালকেরা অধিক গতিতে গাড়ী চালাতে পারে না। একজন চালককে বুঝতে হবে তার উপর নির্ভর করছে সমস্ত যাত্রীর জীবন। তার সাথে যাত্রীদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিশ্চয়তা। চালক যদি অন্য মনস্ক অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালায় তখনই ঘটে এই দূর্ঘটনা। একজন চালককে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং সুস্থ মন নিয়ে ষ্টেয়ারিং ধরতে হবে। তবেই যাত্রীরা নিরাপদ ভাবে যেতে পারবে। তাই একজন ড্রাইভার সমাজের যে কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই উপলব্ধি বোধ তার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ চালক লেখাপড়া জানে না। তাদের রোড সাইন সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই। গাড়ী চালনার সময় কোথায় ওভারটেক করা যাবে এবং কোথায় যাবে না সে বিষয়ে তাদের কোন ধারনা নেই। রোড সাইন সম্পর্কে আমি দুটি সাইনের কথা বলব।

একটি হলো-রাস্তার মাঝখান দিয়ে সাদা দাগ যাহা লম্বালম্বিভাবে চলে গিয়েছে। এটাকে বলা হয় অভারটেকিং নিষিদ্ধ সাইন। এখানে কোন অবস্থায় ওভারটেক করা যাবে না। এধরনের সাইন সাধারনত রাস্তার টার্নিং পয়েন্টে, কোন ব্রীজের আগে বা বাজার এলাকাই দেখা যায়। অপরটি হলো-রাস্তার মাঝখানে ফাকা ফাকা সাদা দাগ। এখানে একজন চালক ইচ্ছা করলে সুবিধামত সময়ে অভারটেক করতে পারবে। এ ধরনের সাইন সাধারনত সোজা রাস্তায় দেখা যায়। হাই ওয়েতে চালার সময় এ দুটি সাইন জানা খুবই জরুরী।

দু’টি পদ্ধতিতে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। প্রথমতঃ যেহেতু বেশীর ভাগ দূর্ঘটনা ঘটায় বাস এবং ট্রাকের চালকেরা। তাদের বেপরোয়া খামখেয়ালী অভারটেকিং এর কারনে এই দূর্ঘটনা গুলো ঘটছে। আমাদের দেশে যে মহাসড়ক আছে কোনটিকেই আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক বলা যায় না। তাই প্রতিটি বাস এবং ট্রাকে বি,আর,টি,এ কর্তৃক সর্বোচ্ছ গতি ঘন্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়ে গভর্ণর সীল সংযুক্ত করে দিলে একজন চালক ইচ্ছামত নির্ধারিত গতির অধিক গতিতে গাড়ী চালাতে পারবে না। চালক পরবর্তীতে এই সীল পরিবর্তন করার চেষ্টা করলে অবশ্যই গাড়ী আটকের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি আশির দশক পর্যন্ত প্রচলন ছিল।

দ্বিতীয়তঃ যেহেতু সড়ক দূর্ঘটনার মূল কারণ চালক নিজে, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জেলা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশকে পর্যাপ্ত স্পীড ডিটেক্টর সরবরাহ করা যেতে পারে।

স্পীড ডিটেক্টর সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারনা নেই। এটা দেখতে অনেকটা মুভি ক্যামেরার মত। একজন পুলিশ সদস্য কোন গাছের আড়ালে দাড়িয়ে গাড়ীর গতি স্পীড ডিটেক্টর এর মাধ্যমে সনাক্ত করে আগে থেকে নির্ধারিত র্কিলোমিটার দুরে অবস্থানকারী টিমকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে অবহিত করে সেই গাড়ীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দিলে চালক গাড়ী চালনার সময় সতর্ক থাকবে। সে বুঝতেও পারবে না কোথায় থেকে তার গাড়ীর গতি সনাক্ত করা হয়েছে। তখন প্রত্যেক চালক মনে করবে অতিরিক্ত গতি বা বেপরোয়া চালনার কারনে যে কোন সময় মহাসড়কে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। যেহেতু চালকের কারনে এই মামলা হচ্ছে তাই এর জরিমানা চালককেই বহন করতে হবে। জরিমানা দেওয়ার ফলে ঐ ড্রাইভার পরবর্তীতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালাবে না। এই টিমের সঙ্গে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট থাকতে পারে। মহাসড়কে চালক অপরাধ করলে নগদ জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা রেখে একটা টিমকে কম পক্ষে ত্রিশ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারণ করে দিলে এবং তারা স্থান পরিবর্তন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রসিকিউশন দ্বারা নগদ জরিমানা আদায় অব্যহত রাখলে চালকেরা বেপরোয়া ও মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালাতে সাহস পাবে না। এক্ষেত্রে যে নগদ জরিমানা করা হবে, তার ৫০% টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হবে এবং অবশিষ্ট ৫০% টাকা ম্যাজিষ্ট্রেট সহ পুরো টিমকে ইনসেনটিভ হিসাবে দেওয়া হলে তারা এই কাজ করতে উৎসাহিত হবে। ফলে উক্ত কাজে দুর্নীতির কোন সুযোগ থাকবে না। মহাসড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিটি জেলায় কম পক্ষে দুটি টিম কাজ করলে এবং তার সার্বিক দায়িত্বে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার মহোদয় উভয়ই যদি দুই ঘন্টা পর পর হাইওয়েতে নিয়োজিত টিমগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দিক নির্দেশনা দেয় তা হলে তাদের কাজের গতি বাড়বে এবং মহাসড়ক সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। এই পুলিশ টিমের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে তাদের পুলিশ সুপার কর্তৃক বাছাই করে স্মার্ট, ইন্টিলিজেন্ট, সৎ এবং পজিটিভ মনের অধিকারী সদস্যদের এই কাজে অন্তর্ভূক্ত করলে জনগনের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া এই টিম মহাসড়কে নসিমন, করিমন সহ অন্যান্য ইঞ্জিন চালিত গাড়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মহাসড়ক অনেকটা বিরাপদে থাকবে। ড্রাইভারদের খামখেয়ালী বেপরোয়া গাড়ী চালনার করনে আমরা আর এই ভাবে একটার পর একটা সড়ক দূর্ঘটনা দেখতে চাই না, আমরা দেখতে চাই না মিরেরসরাই এর মত সড়ক দূর্ঘটনা, যাতে ৩৫ জন কোমলমতি ছাত্র মারা গিয়েছিল। আজও সেই এলাকায় ঐ সমস্ত মায়েদের আহাজারি শোনা যায়। আমরা আর হারাতে চাইনা তারেক মাসুদ ও মিসুক মনিরের মত মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদেরকে। তাই বাস, ট্রাক মালিক এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সহায়তায় জরুরী ভিত্তিতে ট্রাফিক পুলিশ এবং বি,আর,টি,এ কর্তৃক প্রত্যেক চালককে ট্রাফিক আইন ও রোড সাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমার ধারনা সারা দেশে মহাসড়কে যদি একযোগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থান পরিবর্তন করে স্পীড ডিটেক্টর দ্বারা গাড়ীর গতি সনাক্ত করে নগদ জরিমানা আদায় করা চলতে থাকে তাহলে মাত্র সাত দিনের মধ্যেই সারা দেশের মহাসড়ক গাড়ী চালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসা সহ জাতি অভিশপ্ত দূর্ঘটনার কবল থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে।  মোবাইল নং- ০১৭৩৩-৫৩৪৩৮৪

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।