যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে প্রথমবারের মত ভয়ংকর ‘সুপারবাগ’ পাওয়া গেছে

captureডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো মানবদেহে ‘অবলম্বন-শৈলী’ ধরনের এক ভয়ংকর সুপারবাগ পাওয়া গেছে, যা এন্টিবায়োটিক ওষুধকে প্রতিরোধ বা অকেজো করে দেয়। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিভাগের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক ডা টম ফ্রেইডেন ওয়াশিংটনে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য কোনো ওষুধ দিয়ে এই সুপারবাগকে হত্যা করা যাবে না।

উল্লেখ্য, সুপারবাগ হলো এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা এন্টিবায়োটিক ওষুধকে সম্পূর্ণ অকেজো করে দেয়। সেই ক্ষেত্রে ওই রোগীকে কোনোভাবেই সারিয়ে তোলা যায় না।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করেন, ‘যদি আমরা এখনই কাজ শুরু করি তাহলেই বিশ্বকে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৯ বছর বয়েসী পেনসিলভানিয়ার একজন নারীর দেহে ই-কোলাই সংক্রমণের এক বিরল ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যখন অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যর্থ হয় ডাক্তাররা মাঝে মাঝে শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ‘কোলিস্টিন’ নামক অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু দেখা গেলো, এই মহিলার দেহে কোলিস্টিনও অকেজো। অর্থাৎ যার দেহে এই সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়াটি থাকবে তার দেহে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করবে না।

ঘটনার বিবরণে বলা হয়, দেহে ইনফেকশনের কারণে ওই নারী পেনসিলভানিয়ার একটি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায়, ক্লিনিক থেকে একটি নমুনা ওয়াল্টার রিড জাতীয় সামরিক মেডিকাল সেন্টারে পাঠানো হয়। ওয়াল্টার রিড মেডিক্যাল সেন্টার মহিলার প্রস্রাবে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পায়। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কিভাবে এই নারী সংক্রমিত হলেন তাও বের করা যাচ্ছিল না। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গত পাঁচ মাসের মধ্যে ভ্রমণ করেননি।

সিডিসি এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে এটি তদন্ত শুরু করেছে, কীভাবে মহিলাটি এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেন। অন্য কোনো পরিচিত রোগীকে দেখতে গিয়ে তিনি এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ইতিপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য স্থানেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপ, কানাডা এবং চীনেরও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত অর্ধেক রোগীরই নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে। তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে, এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধের এই ব্যাকটেরিয়া বিশ্বে ক্রমবর্ধমান সমস্যা  দাঁড়াচ্ছে। এবং এটি আধুনিক বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।

বৃহস্প্রতিবারের সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সংস্থা সিডিসি’র পরিচালক ড. টম ফ্রেইডেন এই মর্মে সাবধান করে দিয়েছেন যে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রথম উপস্থিতি ধরা পড়লো, আমরা অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখতে পাবো বলে আশা করা উচিত। তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেন এবং বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান, দ্রুত নতুন ওষুধ আবিষ্কারের।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।