নাসিকে স্কুলের গণ্ডি পেরোননি ১২৪ জন প্রার্থী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে সাতজন মেয়র, ১৫৬ জন কাউন্সিলর ও ৩৮ জন সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১২৪ জনই বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোননি।

এটা মোট প্রার্থীর প্রায় ৬২ শতাংশ। প্রার্থীদের হলফনামা থেকে নেয়া তথ্যানুযায়ী গড় হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বার্ষিক আয়, মামলার পরিসংখ্যান, কর প্রদানসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি উপস্থাপন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

তারা জানিয়েছে, সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও দুজনের স্নাতক। বাকি দুজনের মধ্যে একজন এসএসসি এবং অন্যজন এরও নিচে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের তিনজনের মধ্যে দুজনের শিক্ষায় সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা তাঁরা কওমি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে দাওরা এবং মুফতি এজহারুল হক শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে কওমি উল্লেখ করেছেন।

মোট ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। এছাড়া ১৮ জন এসএসসি ও ২০ জন এইচএসসি। স্নাতক ১৬ জন ও স্নাতকোত্তর তিনজন।

মোট ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৪ জনই এসএসসির গণ্ডি অতিক্রম করেননি। এ ছাড়া পাঁচজন এসএসসি ও তিনজন এইচএসসি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী যথাক্রমে পাঁচ ও একজন।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতাই এসএসসি বা এর নিচে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মাত্র ৩০ জন। ৫৯.৭০% (১২০ জন) প্রার্থী বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করেননি। চারজন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি। তাঁদেরসহ হিসেব করলে বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোনো প্রার্থীর হার দাঁড়ায় ৬১.৬৯% (১২৪ জন)।

পেশা : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন ব্যবসায়ী, দুজন আইনজীবী, একজন চিকিৎসক ও একজন চাকরিজীবী। ১৫৬ জন কাউন্সিলরের দশ ভাগের নয় ভাগেরও বেশি (১৪১ জন বা ৯০.৩৮%) পেশায় ব্যবসায়ী। চাকরি ও কৃষিতে যুক্ত যথাক্রমে চার ও তিনজন। একজন আইনজীবীও আছেন।

সংরক্ষিত আসনে ৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনের পেশা ব্যবসা এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ জন গৃহিণী। তিনজন চাকরিজীবীও আছেন। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮০.০৯ শতাংশই (১৬১ জন) ব্যবসায়ী।

মামলা : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে দুটি করে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অন্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা-সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীর মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে, তিনজনের বিরুদ্ধে অতীতে ও একজনের বিরুদ্ধে উভয় সময় মামলা আছে বা ছিল।

বার্ষিক আয় : মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বছরে পাঁচ লাখ টাকার নিচে আয় করেন পাঁচজন এবং পাঁচ লাখ টাকার অধিক আয় করেন দুজন। সেলিনা হায়াত আইভীর বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং সাখাওয়াত হোসেন খানের আট লাখ ৬৯ হাজার ১০০ টাকা। ১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৩ জন বছরে পাঁচ লাখ টাকার কম আয় করেন। বছরে ২৫ লাখ টাকার বেশি আয় করেন দুজন। তাঁরা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলম।

এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনের ৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩১ জনের আয় বছরে পাঁচ লাখ টাকা বা এর নিচে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় করেন দুজন—৬ নম্বর ওয়ার্ডের আফসানা আফরোজ ও ফারজানা হক। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৫৯ জনের (৭৯.১০%) বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকার কম এবং দুজনের (০.৪৯%) ২৫ লাখ টাকার বেশি।

মোট ৯ জন প্রার্থীর আয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি; যার মধ্যে সংরক্ষিত আসনেরই পাঁচজন রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রার্থীদের হলফনামায় সম্পদের যে চিত্র উঠে এসেছে তা কোনোভাবেই প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না। আবার উল্লিখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য নয়।
সম্পদ : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের সম্পদ পাঁচ লাখ টাকার নিচে, দুজনের পাঁচ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, একজনের ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে এবং অবশিষ্ট একজনের ৫০ লাখ টাকার বেশি। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ সাখাওয়াত হোসেন খানের ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯ টাকা।

১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯৮ জন পাঁচ লাখ টাকার কম মূল্যমানের সম্পদের মালিক। চারজনের কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের সম্পদ রয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে হাজি মো. আনোয়ার ইসলাম (তিন কোটি ১১ লাখ টাকা), ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল (দুই কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৮ টাকা) ও গোলাম মুহাম্মদ কায়সার (দুই কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা) এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অহিদুল ইসলাম (এক কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭০ টাকা)। সংরক্ষিত আসনে ৩৮ জনের মধ্যে ২৯ জনের সম্পদ পাঁচ লাখ টাকার নিচে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১ প্রার্থীর মধ্যে ১৩০ জনই পাঁচ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক।

ঋণ : মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কেবল মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের পাঁচ কোটি ৮১ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ জন এবং সংরক্ষিত আসনের দুজন ঋণগ্রহীতা। মোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ১৮ জন। ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থীর কোটি টাকার ওপরে ঋণ রয়েছে। তাঁরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোহরাব হোসেন (দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা), ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মুহাম্মদ কায়সার (এক কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৪৮৪ টাকা) ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম এক কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৩২ টাকা।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।