দামুড়হুদাসহ বাংলাদেশের স্কুলে শিক্ষার ভয়াবহ চিত্র

নিউজ ডেস্ক:  বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সরকারের পরিচালিত এক গবেষণা বলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাত্র ৪০ শতাংশ স্কুল থেকে পাচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন শীর্ষক এই গবেষণায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিয়ে আশঙ্কাজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। খবর বিবিসির

পঞ্চম শ্রেণীর ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীরই গণিত শিক্ষার মান নিম্ন। অন্যদিকে, তৃতীয় শ্রেণীর ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাংলা ভাষা শিক্ষার মান নিম্ন।

বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০০। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২কোটি ১৯ লাখ। ফলে, শিক্ষা গবেষকরা বলেন, এই সব স্কুলের শিক্ষার মানের সাথে দেশের সামগ্রিক শিক্ষার মানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা গবেষক ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মান এবং অপ্রতুলতা খুবই উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, তাদের পরিচালিত ২০১৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে স্কুলে শিক্ষা না পেয়ে শিক্ষার্থী কোচিং নির্ভর হয়ে পড়ছে।

সরকারের প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস-উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা এই গবেষণার ফলাফল গ্রহণ করছেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেন।

গণিতের শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রাথমিক স্কুল স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তবে ঢাকার এক স্কুলের একজন প্রাথমিক শিক্ষক বলেছেন, এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ হলো শিক্ষক স্বল্পতা।

ঢাকার আমতলী স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতিমা শারমিন জানান, তার স্কুলে ৫২৯ জন শিক্ষার্থীর বদলে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১০ জন।

অর্থাৎ একজন শিক্ষককে গড়ে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে সামলাতে হয় যেখানে সরকারি নীতিতেই এই সংখ্যা ৩০ জনের বেশি হওয়ার কথা নয়। গ্রামাঞ্চলে এই চিত্র আরো বেশি খারাপ।

প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক স্বরুপ দাস বলেন শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে থাকার চেয়ে আনুষাঙ্গিক কাজে বেশি ব্যস্ত রাখা হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারে না। শি জরীপের নামে শিক্ষকদের করা হয় হয়রানী।

তিনি আরও বলেন একজন শিক্ষক যদি গণিতের যোগ শেখান তবে তাকে আগে ভাবে পাঠটীকা লিখতে হয়।  এটা না লিখলে কি ক্ষতি হয় তা আমাদের জানা নেই।

‘এমনিতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি, তারপর একেকজনের মেধার স্তর একেক রকম। সবার প্রতি আমরা প্রয়োজনীয় নজর দিতে পারছি না, ফলে অনেক কম-মেধার ছাত্র-ছাত্রী হারিয়ে যাচ্ছে।’

‘প্রশিক্ষণের সময় আমাদের শেখানো হয় ক্লাস নেওয়ার আগে প্রস্তুতি নিতে, কিন্তু সময় কোথায়?’

বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো এবং ঝরে না পড়ার দিকে নজর দিলেও, শিক্ষার মান নিয়ে দিন দিন আশঙ্কা তৈরি হচেছ।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।