ঢামেক হাসপাতালে আবেদন ছাড়াই ৩৮ কর্মচারী নিয়োগ

ডেস্ক: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবেদন ছাড়াই ৩৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও সুইপার নিয়োগের ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এসব নিয়োগে লাখ লাখ টাকার নিয়োগ-বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। আবেদনহীন নিয়োগ জালিয়াতিতে হাসপাতালের একজন সাবেক ওয়ার্ড মাস্টার জড়িত বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৭১টি তৃতীয় ও চর্থ শ্রেণির শূন্য পদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাপকম/প্রশা-১/এডি/পদ পূরণে-০১/২০০৯/১৪৭২ স্মারক মতে বিগত ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর ছাড়পত্র মোতাবেক বিভিন্ন পদে ৩৫৪ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ এবং অনিয়ম হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাপকম/প্রশা-১/এডি/পদ/(কমিটি) ০৪/২০১৫/৭৭৪ স্মারক মতে গত ২৯/০৪/২০১০ তারিখে ওই নিয়োগ বাতিল করা হয়।

ওই নিয়োগ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে প্রথমে ৩৮৭ জনের পক্ষে উচ্চ আদালতে ৮টি ও পরবর্তীতে আরও ২টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এর প্রেক্ষিতে অত্র দপ্তরে ঢামেকহা/প্রশা/১৯৩১৬ স্মারকে গত ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর এলএসএএস, সুইপার, সিকিউরিটি গার্ড কুক/মশালটা, গাড়ীচালক, পদে মোট ২৭৭ জনকে এবং ঢামেকহা/প্রশা/১৮৫৬৩ স্মারকে গত ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ২৭৭ ও ৫৪ জনসহ মোট ৩৩১ জনকে চাকরিতে যোগদানের আদেশ জারি করা হয়।

আদালতের নির্দেশনার আলোকে কার্য সম্পাদনের নিমিত্তে অত্র কার্যালয়ের ঢামেকহ/প্রশা/১৭৪১২ নং স্মারক মোতাবেক ঢামেকের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা: মোঃ আবদুল গনিকে সভাপতি করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট ইনভেন্টরি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি নিয়োগসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রতিবেদন পেশ করেন। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় রিভিউ পিটিশনকারী ৩৮ জনের কারও চাকরির আবেদনপত্র নেই এবং নিয়োগ কমিটি কর্তৃক নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত চূড়ান্ত তালিকায়ও তাদের কারও নাম নেই।

এ ৩৮ জন হলেন এমএলএসএস পদের মোঃ পারভেজ, মোঃ আলমগীর হোসেন, শাহেব আলী, বাদল, মোঃ আকবর হোসেন সাগর, সুশান্ত দেব, মোছাঃ সালমা বেগম, মোঃ উজ্জল মিয়া, হামিদা আক্তার, মোঃ আনোয়ার হোসেন, শাহিনুর আক্তার, মায়া, মাহমুদ হোসাইন, শিপি, সাদ্দাম, মোঃ হারুন, মোঃ শাকিল মিয়া, মোঃ ইউসুফ আলী মারুফ, মোঃ ইউসুফ আলী অরুণ, আঃ কাদির, মোঃ শাহজাহান গাজী, মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, মোঃ মমিনুল ইসলাম, মোঃ আরশাদ, মোঃ শাহ আলম, শিরিন আক্তার, মোঃ আলী আহমেদ, মোঃ ফয়াসাল মামুন, মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাবিনা বেগম, মোঃ আলী হাসান (দুলাল), মোঃ আজিজুর রহমান। আর সুইপার পদের মাজেদা, রুনা, আশেক মিয়া, জায়দা ও রুনা বেগম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ৩৮ জনের চাকরির কোনো আবেদনপত্র নেই এবং নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম না থাকায় তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর দিক নির্দেশনার জন্য ঢামেক কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র লেখেন। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাপকম/আইন শাখা/রিট ১৯/২০১৫/৩৮০ স্মারক মোতাবেক গত ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর রিভিউ পিটিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এরপর ৩৮ জনের নিয়োগ স্থগিতসংক্রান্ত বিষয়ে আপিল করা হয়। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ঢামেক সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক একজন ওয়ার্ড মাস্টারের নেতৃত্বে এ ৩৮ জনকে নিয়োগের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। অথচ এসব ব্যক্তির কেউ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর আবেদনই করেননি। শুধু তাই নয়, এদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মচারী পরিচয়ে কাজ করে আসছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মোঃ রফিকুল ইসলাম খান ওই ৩৮ জনের একজন। তিনিই লাখ লাখ টাকা আদায় করে দুর্নীতিবাজ সাবেক ওই ওয়ার্ড মাস্টারকে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এদের চাকরি বৈধ করতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আদালতে বারবার রিট আবেদন করা হচ্ছে।

অপর সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢামেকের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ আবদুল গনির নেতৃত্বে গঠিত ইনভেন্টরি কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডাঃ খাজা আব্দুল গফুর, ডাঃ মোঃ হোজাম্মেল হক, মোঃ রাশেদুল ইসলাম, মোঃ মাজহারুল ইসলাম খান ও মোঃ রফিকুল ইসলাম।

উক্ত কমিটি যাচাই-বাছাইকালে উচ্চ আদালতের রিট পিটিশনের রায়ের প্রেক্ষিতে যোগদানের ৩৩ জন এমএলএসএস ও ৫ জন সুইপারসহ মোট ৩৮ জনের এমএলএসএস পদের চূড়ান্ত তালিকায় নিয়োগ প্রাপ্তির পর যোগদানের গৃহীত পত্রের স্মারক ঢামেকহা/প্রশা/যোগদান/২০১০/২৬১ তারিখ ১৪/০১/২০১০ইং, এবং সুইপার পদের যোগদানের গৃহীত পত্রের স্মারক ঢামেকহা/প্রশা/যোগদান/২০১০/২৬৫ তারিখ ১৪/০১/২০১০ইং আদেশের উক্ত রিটকারীগণের পূর্বের নিয়োগ প্রাপ্তির ৩৫৪ জনের মধ্যে উক্ত ৩৮ জন রিটকারীর নাম অন্তর্ভুক্ত নেই। আর গত ২২/০৯/২০১৬ইং তারিখে উক্ত ৩৮ জন যে যোগদানপত্র ঢামেক কার্যালয়ে দাখিল করেছেন তা উক্ত কার্যালয়ে রক্ষিত রেকর্ড মোতাবেক তাদের পূর্বের যোগদানের কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি বলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ইনভেন্টরি বোর্ড তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

এরপর ঢামেক পরিচালক রিট পিটিশন নং- ২৪৯/২০১৪, ৩০১৯/২০১৪, ৮২/২০১৪ ও ৮২/২০১৪-এর আলোকে রিভিউ পিটিশন নং- ১০/২০১৫, ১১/২০১৫, ১২/২০১৫ জারিকৃত রায়ের আলোকে আপিল মোকদ্দমা দায়েরের প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি উক্ত আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সেল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আমার সংবাদ

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।