জবির ‘টিএসসি’ দখল করে ফের ব্যবসা

জবি প্রতিনিধি :

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ঘোষিত শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তন কেন্দ্রের (টিএসসি) জায়গা দখল করে ছাত্রলীগ ফের ব্যবসা বসিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৪ সালের হল আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে সমবায় ব্যাংকের দখলে থাকা জমি দখল নিয়ে টিএসসি ঘোষণা দেন তারা। ওই টিএসসিতে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ফের কাপড়ের ব্যবসা বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে পুরনো কাপড় ব্যবসায়ী ইউনুসকে তিন মাসের জন্য শীতকালীন কাপড় ব্যবসা করার অনুমতি দেয় ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর উন্মুক্ত ওই জায়গার চারপাশে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বিক্ষোভসহ উচ্ছেদের আল্টিমেটামও দেয়। তবুও বহাল তবিয়তে চলছে তাদের ব্যবসা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলন করে ওই জায়গাটি দখলে নিয়েছিলেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের টিএসসির স্বপ্ন দেখিয়ে নেতারাই ব্যবসা করছেন। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন তারা। এটা লজ্জাজনক। এ ব্যবসার ফলে টিএসসিতে তাদের রোপণ করা কাঠবাদাম গাছগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের নির্মিত একটি মঞ্চও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য ব্যবসা বন্ধ করার দাবি শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের টিএসটিতে ২০১৪ সালের ১৬ জুন রাতে প্রথমবারের মতো ব্যবসার পথ খুলে বসেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে আট দিনের মাথায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ব্যবসা থেমে থাকেনি। তারপর থেকে বিভিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ওই বছরই শীতকালীন কাপড় ব্যবসার জন্য নৌকা মাঝি শ্রমিক লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল মিঠুর কাছে টিএসসি ভাড়া দেয় তারা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যবসায় আগুন দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে। এরপর ২০১৫ সালের নভেম্বরে আবারো কাপড় ব্যবসার জন্য ভাড়া দেয় ছাত্রলীগের চার নেতা। শিক্ষার্থীরা উচ্ছেদ করতে গেলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীদের বাধা পেরিয়ে ওই বছর সফলভাবে ব্যবসা করতে পেরেছিলেন তারা। এর ধারাবাহিকতায় ফের ব্যবসায় বসিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের কোনো কথা আমলে নিচ্ছেন না। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, দখলকৃত ওই জায়গা তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছিল। তারা সমবায় ব্যাংকের দখল উচ্ছেদ করেছেন। এরপর থেকে ওই জায়গায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জবির টিএসসি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মজার ব্যপার হলো, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যে ছাত্রলীগ টিএসসি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, সেই ছাত্রলীগই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে না এসে স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মধ্যেও তারাই প্রতিবছর টিএসসির জায়গা দখল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শীতের কাপড় ব্যবসার জন্য ভাড়া দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার কামাল হোসেন সরকার বলেন, সমবায় ব্যাংকের ওই জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে কারা জমিটিতে ব্যবসা করছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

ব্যবসায়ীরা জানান, গরিবদের মাঝে স্বল্পমূল্যে কাপড় বিক্রি করার জন্য জবি ছাত্রলীগের নেতারা এ জায়গাটিতে ব্যবসা করতে অনুমতি দেন। এতে সমবায় নেতাদেরও সায় রয়েছে।

জবি ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ব্যবসার বিষয়টি অস্বীকার করে তারা বলেন, এর সঙ্গে তারা জড়িত নন। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।