চবি ক্যাম্পাস ও ট্রেনে স্থানীয়দের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

চবি করেসপন্ডেন্ট: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় গ্রামবাসীদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। ক্যাম্পাসে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মারধর, ছিনতাই, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করা তাদের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

সর্বশেষ শনিবার (২৮ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের একটি পুকুর ঘাট থেকে দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদ হোসেন শাওন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে তার মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এঘটনায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা প্রায় ২০ মিনিট বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দেয় এবং শাটল ট্রেন অবরোধ করে রাখে। পরবর্তীতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সূত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু গত দুই মাসে এ ধরনের হামলা, ছিনতাই, চুরির ঘটনা অন্তত ১০টি ঘটেছে। গত ২৪ এপ্রিল কলা অনুষদের একটি টয়লেট থেকে বাংলা বিভাগের শারমিন নামের এক মেয়ে শিক্ষার্থীর মোবাইল চুরি হয়। গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টের পাশে আনিস ফটোকপি নামক একটি দোকান থেকে নাহিদা আক্তার নামের এক মেয়ে শিক্ষার্থীর মোবাইল চুরি হয়। এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বহিরাগত নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন। ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট এলাকায় আরাফাত কটেজ নামক একটি কটেজ থেকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মিজানুর রহমান টিটু নামের এক শিক্ষার্থীর রুম থেকে মোবাইল, টেবিল ফ্যান, পাওয়ার ব্যাংক, মোবাইলের চার্জার, চার্জার লাইট এবং তার পাশের রুম থেকে আর পাশের রুম থেকে ক্যাশ ৩ হাজার টাকা, একটা মোবাইল সেট চুরি হয়। ওই মোবাইলের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা ছিল।

এ ঘটনার কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দোকানের সামনে সাদাফ নামের আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বেদড়ক মারধর করে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা জড়িত বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এসব ঘটনার কথা প্রশাসনকে জানালে তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। ফলে এসব ঘটনা বেড়েই চলছে। আমরা ক্যাম্পাসে স্থানীয় ও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ করা বন্ধ চাই।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনেও স্থানীয় ও বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বেশ লক্ষণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ট্রেনের মধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসীরা প্রভাব খাটিয়ে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী তুলনায় বগি ও আসন সংখ্যা অপ্রতুল হলেও স্থানীয় ও বহিরাগতরা শাটলের সিটে বসে যাতায়ত করে। এসময় তারা বড় বড় বস্তা, লাকড়ি, টিন ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন ভারী জিনিসপত্রও নিয়ে ট্রেনে বহন করে।

এবিষয়ে আরবি বিভাগের ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘চবির শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের নিজদের শাটলে বহিরাগত কর্তৃক হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য শাটলে পর্যাপ্ত পুলিশ চাই।’

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র  বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে মোটরবাইক, বিনা প্রয়োজনে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এদের বিরুদ্ধে আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে থাকি। পুলিশ ফাঁড়ি, আমাদের নিরাপত্তা দপ্তরের নিরাপত্তা রক্ষীরা সব সময় থাকে, এরপরও আমরা কঠোর অবস্থানে যাবো।’

এসময় তিনি সন্ধ্যার পরে নির্জন এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সীমানা প্রাচীরের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। যার কারণে ১৭৫৪ একরের পাহাড় ও সমতলের বিশাল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফাক-ফোকর দিয়ে আশপাশের মাঠে যারা কাজ করে তারা অথবা বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ঘাপটি মেরে থাকে।’

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।