‘ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না’

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: প্রধানমন্ত্রীর অনেক বড় একটা ফেস্টুন ঝুলানো সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। অথচ এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগের যেন শেষ নেই।

এতে পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকরা পড়েছেন চরম বিড়ম্বনায়। বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে দিনের পর দিন। কখনো কখনো ঘুষের টাকা নিয়ে দালাল ও গ্রাহকদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তবে টাকা দিলে কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যায় গ্রাহকরা।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী সাধারণ পাসপোর্ট করতে ব্যাংকে জমা দিতে হয় ৩৪৫০ টাকা আর জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে দিতে হয় ৬৯০০ টাকা।

এরপর পাসপোর্ট ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয়। ভোগান্তির শুরু প্রথম ধাপ এখান থেকেই। জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো। এরপর অনেক কষ্টে জমা দেয়ার পর শুরু হয় ভুল ধরার পালা। যারা ঘুষ দেন না তাদের বিভিন্ন ভুল ধরে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয়, কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে আসেন। এমন অভিযোগ পাসপোর্ট করতে আসা শত শত গ্রাহকদের। তবে ঘুষ দিলেই কাগজপত্র সব ঠিক হয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে অর্ধশতাধিক দালালের। তাদের মাধ্যমে অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সাথে চলে গোপন লেনদেন।

পাসপোর্ট প্রতি তাদেরকে দিতে হয় এক হাজার ৫০ টাকা। সেই টাকা সরাসরি চলে যায় প্রধান কর্মকর্তার পকেটে। এভাবে দিনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় করেন পাটপোর্ট কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা।

তাছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতেও দিতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি। বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

দেবহাটা হতে পাসপোর্ট করতে আসা আমিনুল ইসলাম (৫০) নামের এক জন বলেন, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও জমা দিতে পারিনি।

ইমরান নামের আরও একজন বলেন, অনেক কষ্টে ফরম জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন ভুল ধরিয়ে ফরম ফিরিয়ে দিয়েছে। নতুন করে ফরম পূরণ করে আনতে বলেছে।

রহিমা বেগম বলেন, সাধারণ পাসপোর্ট করতে দালালকে দিয়েছি ৫৩০০ টাকা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সে করে নেবে। দালাল ছাড়া কোনো পাসপোর্ট হয় না। পাসপোর্ট করতে হলে মাধ্যম ধরতে হবে। তাহলে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।

তবে এসব বিষয়ে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা আবু সাঈদ ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে কোনো প্রকার দুর্নীতি হচ্ছে না। আমি যোগদানের পর থেকে বদলে গেছে পাসপোর্ট অফিসের চিত্র।

এছাড়া স্থানীয় এক সাংবাদকর্মী রিপোর্ট করায় তাকে পত্রিকা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং আপনি বিষয়টি বুঝতেই পারছেন। ঘটনা কোনো পর্যায়ের। এখানে দালালদের কোনো স্থান নেই। এছাড়া আপনি অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলেও জানান পাসপোর্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তা।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।