একাদশ শ্রেণীতে গ্রাম-শহরে ভর্তি ফি বৈষম্য

ঢাকা: একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণে গ্রাম-শহরের বৈষম্য স্পষ্ট। উপজেলা ও জেলা যেখানে ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা, সেখানে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা।

এছাড়া ভর্তি নীতিমালায় উন্নয়ন ফি নামে আরেকটি খাতে ৩ হাজার এবং বোর্ড ফি বাবদ ২শ’ টাকা ধার্য করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকার একটি কলেজে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে অভিভাবকের কমপক্ষে ১২ হাজার ২শ’ টাকা লাগছে।

শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জানান, ‘এটা ঠিক শহর-গ্রামে ফি নির্ধারণে পার্থক্য বেশি হয়ে গেছে। নীতিমালা আমার কাছে আসার পর বিষয়টি আমারও নজর কেড়েছিল। আমরা এবার নতুন কিছু করছি না। কয়েক বছর ধরেই এটা চলে আসছে। বিষয়টি ঢাকার মানুষের জন্য সহনীয় হয়ে গেছে।’

এদিকে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা এই ফি নির্ধারণকে ‘স্পষ্ট বৈষম্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি এ বৈষম্য দূর করতে সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়ে তারা বলেছেন, ঢাকায় কেবল উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া করে না। শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের সন্তানরাও লেখাপড়া করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কলেজ ভর্তি ফি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে কম আয় এবং বেশি আয়ের মানুষের সন্তান একই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারে। অর্থাৎ বিদ্যমান ফি কমিয়ে সবার সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভর্তিতে টিআইএন (করদাতা) সনদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই সনদ দেখে যিনি ৫-৬ লাখ টাকা কর দেন, তার কাছ থেকে বেশি উন্নয়ন ফি আদায় করতে হবে। আর যারা আয় কর দেয়ার সামর্থ্য রাখেন না, তাদের সন্তানকে উন্নয়ন ফি থেকে রেয়াত দিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তি ফি কমাতে হবে।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা যে আদর্শ পোষণ করি তা হচ্ছে শিক্ষার ফি যত কম হবে তত জনগণের ভালো। কিন্তু কলেজ ভর্তিতে নির্ধারিত বৈষম্যমূলক ফি এই আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা কিছুতেই জনগণের জন্য সহনীয় হতে পারে না। বরং এটা তাদের জন্য বহন করা কঠিন হচ্ছে। কেননা ঢাকায় এমন অনেক অভিভাবক আছেন যার সন্তানকে ভর্তি করতে মাসের গোটা আয় ব্যয় করতে হচ্ছে। আমি মনে করি ভর্তি ফি কমানো দরকার। কেবল কলেজে নয়, স্কুলের ক্ষেত্রেও এই নীতি প্রবর্তন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তবে গ্রামের ফি বাড়িয়ে বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নেয়া যাবে না। শহরেরটা কমাতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন চার্জসহ সর্বসাকল্যে ১ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেয়া যাবে। জেলা সদর পর্যায়ের কলেজে ২ হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার, আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিওবহির্ভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদেও বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অনুমোদিত ফির আওতায় রেজিস্ট্রেশন ফি একশ’ বিশ, ক্রীড়া ফি-৩০, রোভার/রেঞ্জার ফি-১৫, রেড ক্রিসেন্ট ফি-২০ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি হিসেবে ৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর পাঠ বিরতি থাকলে পাঠ বিরতি ফি হিসেবে একশ’ টাকা, বিলম্ব ভর্তি ফি ৫০ টাকা এবং শাখা বা বিষয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ২৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

নীতিমালার বিষয়ে শিক্ষা সচিব বলেন, যদিও নীতিমালায় শহর-গ্রামে একটি ফারাক দেখা যাচ্ছে, তবে দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে যতদূর সম্ভব ফি মওকুফের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এবার নীতিমালা হয়ে গেছে। আগামীতে নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে শহর-গ্রামের বৈষম্য বিষয়টি আমলে নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৬ মে থেকে একাদশ শ্রেণীতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে ৯ জুন পর্যন্ত।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।