একজন ভাইস-চ্যাঞ্জেলরের খোঁজে এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

ড. আহমেদ ইমতিয়াজ: ১. আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য জব স্যাটিসফ্যাকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকতা পৃথিবীর যে কোনো দেশেই অতিমর্যাদা ও সম্মানের। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকরা এমন বিছু কর্ম করছে (রাষ্ট্র মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় আনপ্রোডাকটিভ কর্ম করতে পরোক্ষভাবে বাধ্য করা হচ্ছে) যাতে কিনা অনেক সময়ই তাঁদের মর্যাদা ধুলোয় মিশে যায়। বিদেশে আমাদের অনেক শিক্ষককে অর্থের লোভে আত্মসম্মান ও লজ্জাবোধ ছুড়ে ফেলে নি¤œ শ্রেণির কাজ ও জীবিকা গ্রহণে কুরুচি দেখে অনেকবার স্তম্ভিত হয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার রাবি প্রতিনিধি জনাব মর্তুজা নূর “পিএইচডি করতে গিয়ে ফিরছেন না শিক্ষকরা” শিরোনামে একটি খবর ছেপেছে (২২/২/২০১৭)। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৪ জন শিক্ষক বিদেশে পিএইচডি করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। রাবি থেকে গৃহীত বেতন-ভাতা ১০% সুদসহ ফেরত দেবার কথা থাকলেও ১৬ জনের নিকট থেকে এখনও অর্থ ফেরৎ পাওয়া যায়নি। প্রফেসর অরুণ কুমার বসাক স্যারের বরাত দিয়ে মূলত মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন না থাকায় ব্রেইন ড্রেইন এর বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যাঁরা বিদেশে ডিগ্রী করতে গিয়ে আর ফেরেননি তাঁদের নিয়ে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর ‘তাঁরা ফেরেন নাই’ লেখাটিও একই ধরনের ছিল যা আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে (প্রথম আলো, ৪/১০/২০১১)। জনাব আবুল মকসুদ এর ভাষায় “তাঁদের (শিক্ষকদের) কোনো রেস্তোরাঁয় কিচেনে বসে তরকারি কুটতে, পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে, রাস্তায় গাড়ি মুছতে, কোনো বদমেজাজি বুড়ির বাগানের ঘাস সাফ করতে, কোনো সাহেবের ঘোড়ার ঘাস কাটতে, সপ্তায় ৫ বাড়িতে ৫ দিন গিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতে, কোনো নিঃসঙ্গ বুিড়র ৪/৫টি কুকুরকে সকালে-বিকেলে পায়খানা করিয়ে হাওয়া খাইয়ে আনতে, কোনো ডিপার্টমেন্ট স্টোরে লরি থেকে মাল নামিয়ে ট্রলিতে করে ঠেলতে অরুচি নেই”। এই যদি সম্মানিত শিক্ষকদের রুচি হয় তবে জাতীয় রুচি ও মর্যাদার ঝাণ্ডা উড়াবে কে? যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় গর্ববোধ করে, নিজেকে অ্যারিসটোক্র্যাট বা এলিট সোসাইটির সদস্য ফলায় অথচ গভীর রাতে অন্ধকারে হকার সেজে বাড়ি বাড়ি পত্রিকা দিতে, কুলি হয়ে ট্রাক লোড/আনলোড করতে, কোনো জিমে/স্টেডিয়ামে ক্লিনিংয়ের কাজ বা চেয়ার-টেবিল গোজগাছ করার মতো কাজ পেতে লবিং করে তাদের পারিবারিক বড়াই তথা রয়ালিটি একেবারেই বেমানান। উর্দিতে শতেরটি বোতাম থাকলে বুঝি উনি চৌকিদার। কিন্তু শিক্ষক চেনার উপায় কী? সকাল দুপুর সন্ধ্যা আর আলো আধারের কর্ম-আয়ে যে শি¶ক (সব শিক্ষক নয়) গিরগিটির মত রং বদলায় তাঁদের শ্রেণিচরিত্র বুঝবো কেমনে? অনেকেই বলতে পারেন কোনো কাজই ছোট না। আমিও তাদের সাথে একমত। একজন প্রফেসর বা প্রকৌশলী তার নিজের গাড়ি নিজে চালানোতে মোটেও দোষ নাই কিন্তু তাঁদের দ্বারা ট্যাক্সি চালানো এক ধরনের অপচয় (brain waste)। অপকর্মও। অবসরে নিজের বাগানের ঘাস নিজে পরিস্কার করে ফুলগাছে পানি দেওয়া গেলেও অন্যের বাগানে মালীর চাকরি করা যায় না। যে শিক্ষক/কর্মকর্তা বিদেশে ওসব কাজ করেন তারা কিন্তু নিজ দেশে গেলে তা গোপন করবেন। যে কর্মের কথা অন্যকে বলা যায় না তাই এক ধরনের অপকর্ম। এই লুকোচুরির মধ্যেই বিচ্যুতি ও অবিচারের গন্ধ। মানুষের কর্মকর্তা যদি সীমাহীন না হয়ে থাকে তাহলে আয়মূখ্য অতিরিক্ত কর্মযজ্ঞের ক্ষতিকর প্রভাব প্রধান দায়িত্ব-কর্তব্য শিক্ষা-গবেষণাকে কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবেই। তাই শিক্ষক বা অন্যান্য দায়িত্বশীল পদে কর্মরত (দেশে বা বিদেশে) মানুষের আত্মসম্মান ও লজ্জাবোধ যথার্থভাবে জাগ্রত হবে সেটাই দেশবাসীর কাম্য।

২. মার্চ ২০, ২০১৭ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস-চ্যাঞ্জেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মু. মিজানউদ্দিন এর দায়িত্বকাল শেষ হবে। কেমন চালিয়েছেন প্রফেসর মিজানউদ্দিন তা নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হতে পারে। অন্যান্য ভিসিদের মতো কিছুটা সফলতা ও খানিকটা ব্যর্থতা নিয়েই শেষ করতে যাচ্ছেন তাঁর মেয়াদকাল। সফলতা-ব্যর্থতার সমালোচনা আবার সরকার দলীয়দের কাছে একরকম এবং অদলীয় আম জনতার স্তরে থাকা সাধারণ শিক্ষকের কাছে অন্যরকম। সুবিধাবাদী ও অসুবিধাবাদীদের কাছেও বিশ্লেষণটা ভিন্নতর। আর ভিন্ন পথের লোকদের তো ভিন্ন মত থাকবেই। সর্বপরি একাডেমিক বিষয়ে একটি জটিল কাজের জন্য শিক্ষকদের মধ্যে আম জনতার কাতারে থাকা সত্তে¡ও বর্তমান ভিসি মহদয়ের সাথে একবার সাক্ষাত পাওয়ার সুযোগ জুটেছিল। তাতে মানুষ হিসাবে উনাকে অতটা ভিনডিকটিভ মনে হয়নি যতটা কানকথায় রটেছে। বরং বিভাগীয় সভায় আমার বিষয়টিকে যতটা কমপ্লে· স্ট্রাকচার দেয়া হয়েছিল তার চেয়ে অনেক সহজতর সমাধান তিনি দিয়েছিলেন। এই হিসাবে আমার কাছে তিনি কিছুটা অতিরিক্ত ধন্যবাদ ও সম্মান সবসময়ই পাবেন। যাইহোক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের যে বিধি সম্মত পদ্ধতি তা আমরা বহুদিন দেখিনি। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রক্রিয়াটি জীবন্ত জীবাশ্মের মতো কোনো মতে টিকে আছে। যারা নিয়মগুলো সৃষ্টি করেছেন তারাই ওগুলোকে অকেজো কাগজের মর্যাদা দিয়ে মিউজিয়ামে স্থান পাবার মতো নগন্য বিষয়ে পরিণত করে বিকল্প পদ্ধতিটি বিশেষ স্বার্থে চালু রেখেছেন। ওসব নিয়ে খুব বেশি কথা বললে অনেকে প্রত্বতত্ববিৎও ভাবতে পারেন। আসলে এখন সময়ই চলছে অনির্বাচনের। অনির্বাচিত ফটোকপির ভিসি-র শাসন ও সংস্কৃতিতে আমরা অনেকটা অভ্যস্ত। যেমন অভ্যস্ত তরতাজা ফ্রেশ গাছপাকা সিদুরে আমের পরিবর্তে প্রিজারভেটিভ মিশ্রিত ম্যাংগো জুসে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাবি-তে সামনে যে ভিসি মহোদয় আসবেন তিনিও টেকনোক্র্যাট ভঙ্গিমায় ফটোকপির বলেই হবেন। তবে স্বাধীনতার মাসে রাবি-তে ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সাধারণ জনগণের তথা অধিকারের স্বাধীনতা টিকে থাকবে নাকি গণতান্ত্রিক দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের রাষ্ট্রপতি (চ্যাঞ্জেলর) কর্তৃক বঙ্গভবনের ক্ষমতার স্বাধীনতা টিকে থাকবে সেটা দেখার জন্য আরো কয়েকদিন বেঁচে থাকার আকাংক্সখা রইল। অনির্বাচিত ভিসি স্বভাবতই শিক্ষকদের মতামত হরণ করে শিক্ষা-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের স্থান থেকে সরিয়ে দলবাজদের গারদ বানানোর কৌশল বৈই অন্যথা নয়। কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন যাবৎ রাবি-র সকল গেইটে তালা লাগিয়ে বাস সার্ভিস বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের প্রতিষ্ঠান বানানোর যে মহড়া দেখেছি এসব তারই বহিঃপ্রকাশ। কারণ, অনির্বাচিত ভিসি মানেই এমন লোকের আবির্ভাব সরকার তথা দলের কথা শুনলেই যাদের মেরুদণ্ড পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী কোণে সামনের দিকে বেঁকে যায়। নেতাদের দেখলেই যাদের লেজ নাড়ানো শুরু হয়ে যায়! ভিন্নমতের সহকর্মী ও সমর্থকদের দমিয়ে রাখার জন্যও প্রতিভাসম্পন্ন (!) ওইরকম দল/নেতাপ্রিয় নির্ভিক ব্যক্তির দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এমন বিশেষ উপায়ে খুঁজে পাওয়া ব্যক্তি মানেই অ-একাডেমিক, অগবেষক এমনকি প্রশাসনিক কাজে অদক্ষ বাঙ্গালির আবির্ভাব।

৩. সততা, যোগ্যতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি গুণসমূহ দিনে দিনে অদামি অপদার্থ বিষয়ের দিকে বিবর্তন হচ্ছে। গুণবাচক অধিকাংশ শব্দসমূহের প্রায়োগিক অর্থ ক্রমশ বিলুপ্তির পর্যায়ে। ‘সত্যদা একজন ভালো মানুষ’ এর অর্থ তিনি একজন অকেজো অপদার্থ মানুষ! যদি তাই না হবে তবে সরকার ফ্যা·পত্রের মাধ্যমে যে ভিসি নিয়োগ দেয় কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল ও স্বার্থক শিক্ষক-গবেষকদের তালিকায় তাঁর নাম থাকে না। কেনো বর্বর সমাজের মতো বুদ্ধির জোরকে গলা ও গায়ের জোরের কাছে বারবার হার মানতে দেখতে হয়? কেনো মনন ও সৃষ্টিশীলতাকে দমিয়ে লবিংকে প্রিফার করা হয়? সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি মুক্ত থাকার পরামর্শ দেয় অথচ ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্লাব মাতানো দুর্বল প্রোফাইলের স্বভাবে অশিক্ষক কর্মে অগবেষক শ্রেণির লবিংপ্রিয় আনএডমিনিসস্ট্রাটিভ প্রফেসরদের প্রাধান্য দেখা যায়। ফলে কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা, যোগ্যতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি অন্ধকারে গুমরে মরে। অফুরন্ত কালো টাকার মালিক, মানুষের সীমাহীন ক্ষতি করার সামর্থবান ব্যক্তি, অসীম প্রতাপশালী এবং ভোগবিলাসীরাই জনগণের কাছে সফল ও স্বার্থক হোমো সেপিয়ান হিসাবে পরিগণিত হওয়ার জন্য যা কিছু দরকার রাষ্ট্র যেন তাই করছে। এত কিছুর পরেও আমরা নিরাশ হবো না। নিভে যাব না। সরকার আমাদের অনেক আশারবাণী শুনাচ্ছে, বাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা সরকারের প্রতি ভরসা রাখতে চাই। হোক অনির্বাচিত তবুও সরকার একজন সুযোগ্য শিক্ষককে ভিসি নিয়োগ দিবে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উভয় কার্যকর্মের মধ্যে ইনটিগ্রেটি বজায় রেখে তা এক্সিকিউট করার মতো মেচুউরিটি আছে। নীতিবান ও ডেডিকেটিভ মানুষ হিসাবে শ্রদ্ধেয়, একাডেমিশিয়ান হিসাবে প্রাজ্ঞ, গবেষক হিসাবে বিখ্যাত, শিক্ষাঙ্গনের প্রশাসক হিসাবে পরিক্ষিত। ভিসি আর সিইসি বিষয় দু’টি সম্পূর্ন ভিন্নতর। সিইসি-র ব্যাপারটা যতটা না শ্রদ্ধার তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস ও আস্থার। কিন্তু একজন ভিসিকে হতে হয় প্রথমত সম্মান ও শ্রদ্ধার অতঃপর বিশ্বাস ও আস্থার। শিক্ষার্থীরা যখন দেখবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি একজন সৎ মানুষ, ভালো শিক্ষক, খ্যাতিমান গবেষক, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের প্রতিনিধি এবং পাণ্ডিত্ব সম্পন্ন তখন অমন ব্যক্তি হওয়ার ¯^প্ন পুরণের জন্য তারা তাদের শিক্ষকের পদাংক অনুসরণ করবে বৈকি। পিএইচডি ডিগ্রী ছাড়া একজন শিক্ষক কীভাবে ভিসি হোন তা মাথায় আসে না। আমার জানা মতে চট্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ভিসি বর্তমানে ইউজিসিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন এমন ব্যক্তির পিএইচডি ডিগ্রী নাই (তথ্যটি অসত্য হলে দুঃখিত)। রাষ্ট্রের যে টেরিটোরিতে উন্নত দেশের বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পিএইচডি ও পোস্ট পিএইচডি করা প্রফেসরের প্রাচুর্য সেখানে পিএইচডি বিহীন ব্যক্তিকে তাদের কর্তা বানানোর প্রথাটি নিশ্চয়ই কোনো অপ্রাতিষ্ঠানিক বিবেচনায় করা হয়ে থাকে। অবশ্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁর নিজের সম্পর্কে পর পর যে উপভোগ্য ভাষণ শুনিয়ে চলেছেন তাতে যুবসমাজ লেখাপড়া করে সময় ও মেধা নষ্ট করবে কি-না তা গবেষণার নতুন প্রসংগ হতে পারে। যাইহোক, এভাবে ভিসি নিয়োগের মাধ্যমে সরকারের ভিশন সফল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে চলার মিশন অপূর্ণই রয়ে যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের বর্তমান চিত্র তারই জীবাশ্ম। হ্যাঁ বলতে পারেন সত্যেন বোসের তো পিএইচডি ছিল না। ডিগ্রীর প্রয়োজন যদি না ই থাকবে তবে ড. মু. শহীদুল্লাহ, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, ড. মু. কুদরাত-এ খুদা, আচার্য্য প্রফুল্ল রায় প্রমূখদের বিদেশি ডিগ্রী কি নিতান্তই শখ তামাশা ছিল? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার জন্য বিশ্বব্যাপি পিএইচডি ডিগ্রীর যে আবশ্যকতা তা কি শুধুই অপচাহিদা? রাজনৈতিক বিবেচনায় এভাবে ভিসি নিয়োগ করা হয় বলেই উনাকে পাড়ার নেতার ইশারায় চলতে হয়, ভিসির সাথে সাক্ষাত করতে একজন প্রফেসরকে ২/৩ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হলেও ওয়ার্ড কমিশনাররা কোনো পূর্বানুমতি ছাড়াই বীরদর্পে আসা যাওয়া করে, শিকক্ষ নিয়োগে মেধা ও সৃজনশীলতার পরিবর্তে দলীয় প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পুলিশ, বিজিবি বা আর্মিতে তাদের ঊর্ধ্বতনকে সম্বোধন করার অফিসিয়াল টার্ম/ভাষা আছে। বিসিএস কর্মকর্তারাও তাঁর সিনিয়রকে নির্দিষ্ট শব্দ প্রয়োগে এড্রেস করে অথচ সর্বোচ্চ শিক্ষিত ও পদাধিকারী একজন প্রফেসর/শিক্ষককে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লার্ক বা কর্মচারীরা ভাই/চাচা বলে সম্বোধন করে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, টিভি, মোবাইল কোম্পানি, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল ও বাস মালিকরা রমরমা ব্যবসা নিয়ে তরতর করে এগিয়ে চলছে অথচ দেশ ও জনগণের সম্পদ গরীব মেধাবী ছাত্রদের আশ্রয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতাসীনদের দাপটে ধ্বংস প্রায়।

৪. বিদেশ বিভুঁইয়ে নিজেকে, নিজের দেশকে এমনকি আমাদের আচার-আচরণকে অন্যের সাথে তুলনা করে আমাদের হীনতা, দীনতা, নষ্টামি, ভ্রষ্টামি তথা সীমাহীন অবস্থায়-অধঃপতন ধরা পড়েছে। জীবন, রক্ত ও ইজ্জত হারিয়ে যে দেশ আমরা পেয়েছি তার পাসপোর্টটি প্রায়শই অসহনীয় বিড়ম্বনা ও গ্লানির কারণ হয়েছে। সভ্য সমাজে পদে পদে নিজেকে অসভ্য-বর্বর সমাজের উপাদান মনে হয়েছে। সেই অসহনীয় উপেক্ষা থেকে মনের গহীনে বারবার রং বদলানোর স্বপ্ন জন্ম নিয়েছে। সেই স্বপ্নে স্বেচ্ছাচারিতা ছিলনা বরং স্বাধীনতা ছিল। প্রতিটি মানুষ/জীব তার নিরাপত্তার জন্য স্বাচ্ছন্দের পরিবেশে যেতে চায়। তাতে কোনো অন্যায়ও হয়তো হতো না। না ফেরার বিপক্ষে রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা ছিলনা, আইনও নাই। বরং আছে শাসক শ্রেণির সীমাহীন অজ্ঞতা, অদূরদর্শিতা আর ব্যর্থতা। যে মানুষ বিদেশে অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে কাজ করতে পারে সে দেশে ফিরে অচল অকেজো হয়ে যায়। এটা চলার দোষ? নাকি চালকের দোষ? তবুও দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর কাক্সিখত স্বপ্ন নিয়েই অনেক শিক্ষক বিদেশে উচ্চ বেতনের অফার এবং নিরাপদ জীবন যাপনের সুযোগ মাড়িয়ে স্বদেশে ফিরেছেন। কিন্তু সেই কাক্সিখত স্বপ্ন পুরনের জন্য হয়তো আরোও বহুকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।

লেখক:

ড. আহমেদ ইমতিয়াজ

সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, রা.বি.।

E-mail: [email protected]

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।