ইংরেজি মাধ্যম স্কুল অনিয়ম আর শিক্ষিকাদের সাজগোজের আখড়া

ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে টিকে থাকতে হলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু ব্রিটিশ এবং অ্যামেরিকান কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলোতে এখনও পর্যন্ত নিদৃস্ট কোন নীতিমালা না থাকার কারণে অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে প্রায় সবকটি স্কুল। প্রতিনিয়ত ক্রম বর্ধমান বেতনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। বিনিময়ে স্বল্প বেতনের অভিজ্ঞতা এবং সম্পূর্ণ ট্রেনিং ছাড়া শিক্ষক। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সামনে যে আদর্শ, অনুপ্রেরণা, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ এবং স্বপ্ন থাকার কথা বর্তমান স্কুল কত্রিপক্ষ তা প্রদান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ তাঁরা মুনাফার ব্যাপারে যতটা সচেতন শিক্ষার ব্যাপারে ঠিক ততোটাই অজ্ঞ এবং অসচেতন। কারণ একটাই কোন প্রকার জবাব দিহীতা নেই।

স্কুলের প্রারম্ভে অনেক সম্ভাবনার ফুলঝুরি থাকলেও বাস্তবিক অর্থে কথার সাথে কাজের মিল নেই। শুরুতে বাইরে থেকে যতটা নিয়ম-নীতি, ভেতরে ততোটাই অনিয়ম অসামঞ্জস্য। সুন্দরী শিক্ষিকারা তাঁদের সাঁজ গোঁজ যতটা ফ্যাশন সচেতন পড়াশুনা এবং শিশুদের হ্যান্ডেল করাতে ঠিক ততোটাই অপারদর্শী।

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা শিক্ষায়, মহানুভবতা, দায়িত্বে-কর্তব্যে, আচার-আচরণে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হয়ে কোমল মনে স্থায়ী ছাপ ফেলবে এবং তাঁদের জীবনে সুদূর প্রসারী কল্যাণ বয়ে আনবে, এমনটাই কাম্য সকলের। কিন্তু বর্তমান সময়ে নাম করা বেশীর ভাগ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলো বড় লোকের মেয়ে এবং স্ত্রীদের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এসব হাই সোসাইটির মহিলারা গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি করে দিনের বেলা ঘুম চোখে স্কুলে যেয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ওপর অন্যায় আচরণ করে। রাতের নানা পার্টিতে তারা কাছে থাকা সঙ্গির কাছ থেকে, রাতে চেনা মানুষদের কাছে যে স্তুতিবাক্য চান স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাই শোনে মুগ্ধ হতে চান। তাঁদের কাছে এটাই স্বাভাবিক কেননা তাঁদের কোন ট্রেনিং নেই, রাতের পার্টি এবং দিনের স্কুলের পার্থক্য করতে পারার মত জ্ঞানও নেই। কোমল মতি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের সাথে কেমন ব্যাবহার করতে হয় তা সম্পূর্ণ অজানা তাঁদের। স্কুলে আসা এবং যাওয়া কেবলই বিনোদন, সমাজে পরিচয় এবং নিজের গুরুত্ব বাড়ানো বৈ আর কিছু নয়।

উন্নত দেশ গুলোতে শিক্ষক হতে হলে কষ্ট করে কয়েক বছর আলাদা ট্রেনিং নিতে হয়, জ্ঞান অর্জন করতে হয়, অভিজ্ঞতা অর্জন করে করে উপড়ে উঠতে বা প্রমোশন পেতে হয়। আমাদের এখানে এসবের বালাই নেই সমাজের ক্ষমতাবান কারো সাথে সম্পর্ক থাকলেই চলে। যার কারণে শিক্ষকদের মান দিনের পর দিন বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে এতো অনিয়ম সত্ত্বেও নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলো কি ভাবে এতো ভাল রেজাল্ট করছে! উত্তর একটাই অসহায় অভিভাবকরা নিরুপায় হয়ে সন্তানদের স্বার্থে তাঁদের উন্নত ভবিষ্যতের আশায় হাজার হাজার টাকা দিয়ে বাসায় প্রাইভেট টিউটর রেখে প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করছেন।

এসব প্রতিশ্রুতিহীন শিক্ষকদের খারাপ ব্যাবহার কৈশোর মনে যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে, যন্ত্রণার ছাপ ফেলে তা থেকেই পরবর্তীতে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ড্রাগে আসক্ত হয়। ২ বছর আগে হলি আরতিজেন হামলায় এমনই একটি নাম করা স্কুলের দুজন ছাত্রকে আমরা জঙ্গি হিসেবে নির্মম মৃত্যু মুখে পতিত হতেও দেখেছি। সমস্ত দায়ভার তাঁদের পরিবারের উপর এসে বর্তেছে অথচ দিনের বেশিরভাগ সময় যে স্কুলে কাটিয়েছে সে স্কুলের কোন দায়বদ্ধতা নেই, তাঁদের কোন উত্তর নেই, আক্ষেপ নেই, পরবর্তীতে তাঁদের কোন পদক্ষেপও নেই।

এখনই এইসব স্কুল এবং অপরিণামদর্শী শিক্ষকদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা না গেলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পতিত হবে নিশ্চিত।

লেখক: সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।