সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কুপিয়ে আহত

সিলেট: সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কোপানোর আগে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম।

syl_std-550x307
সোমবার বেলা ৩ টা ২১ মিনিটে ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলোর কাছে আমি সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থী।’
এই স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পরই এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে। ওই সময়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বের হয় খাদিজা। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মঙ্গলবার ভোরে তাকে ঢাকায় এনে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরআগে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা হন পরিবারের সদস্যরা।
আহত খাদিজা আক্তার নার্গিসের ভাই নুর আহমদ জানান, তার বোন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সোমবার দুপুরে পরীক্ষা দিতে সে এমসি কলেজে যায়। পরীক্ষা শেষে বের হলে বিকেলে সন্ত্রাসী বদরুল তার বোনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করার কারণে তার মগজ বের হয়ে গেছে। এছাড়া হাতে কোপানোর কারণে রগও কেটে গেছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। ডাক্তারদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বদরুল আলমকে আটক করে গণধোলাই দেয় শিক্ষার্থীরা।
হামলাকারী বদরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার চেচানবাজারের সোনাইগাতি গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। ছাতকের নূতন বাজার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়। ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র হিসেবে অনার্স শেষ করে। সে শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাবির এক ছাত্র জানান, বদরুল শাবিতে ভর্তির পর সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মাসুক মিয়ার বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে উঠে। এর আগে কলেজে থাকাকালীন সময় থেকেই খাদিজা আক্তার নার্গিসের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
দীর্ঘ ৬ বছর তারা প্রেম করে। সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে ভাঙ্গন দেখা দেয়। খাদিজা আক্তার নার্গিস এড়িয়ে চলতে শুরু করে বদরুলকে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যও ছিলো। গত ২৫ আগস্ট বদরুল আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। এতে উল্লেখ করে, ‘হৃদয়ের পার্লামেন্টে আজ স্পিকার নেই। মনের জনসভায় নেই কোনো বক্তা। অন্তরে হরতাল ডেকেছে বিরোধীদল। ভালবাসার ভোটকেন্দ্রে একটিমাত্র ভোট পেয়েছিলাম; তাও আবার জাল। হায়রে কপাল।’ ৩১ আগস্ট আরেকটি স্ট্যাটাসে ‘দূরে সরে গেছ, তাতে কী/ দু’জনে এক আকাশের নিচেই তো আছি’ উল্লেখ করে সে।
এদিকে বদরুল আলম সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেকটা উগ্র মেজাজি ছিল সে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে, বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত। তার বিরুদ্ধাচরণ করলেই মারধোর করতো সে। বছর চারেক আগে শাবির হলে দলবল নিয়ে হামলা করে বদরুল। এ সময় সে কয়েকটি কক্ষে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এর জের ধরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার জাঙ্গাইল এলাকায় তার উপর হামলা হয়। ওই সময় ছাত্রলীগ দাবি করেছিল, শিবির নেতাকর্মীরা বদরুলকে কুপিয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান (রহ.) থানার ওসি শাহজালাল মুন্সি জানান, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বদরুল ও খাদিজার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি খাদিজা বদরুলকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলে ৬ বছরের প্রেমে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়ে খাদিজাকে কোপায়।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।