‘শিক্ষকের মর্যাদা’ পাঠ্যবই থেকে উধাও

পাঠ্যবই থেকে উধাও হয়ে গেছে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানে বহুল উচ্চারিত ও পঠিত ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি। কবি ও শিক্ষক কাজী কাদের নেওয়াজের এ কবিতাটি যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শ্রেণির বাংলা বইয়ে রাখা হলেও বর্তমানে তা আর নেই। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল পাঠ্যবই ঘেঁটে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ২৫ জন শিক্ষক।teachers dignity 2

শিক্ষা বিষয়ক  পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাবার্তার পক্ষ থেকে ২৫ জন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটির অবস্থান সম্পর্কে। তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেছেন যে, কবিতাটি এখন কোনো ক্লাসেরই পাঠ্য বইয়েই নেই। কবে থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তা-ও বলতে পারেননি তারা। তবে, তারা নিশ্চিত করেছেন যে, মাত্র তিন-চার বছর আগেও তারা পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে কবিতাটি দেখেছেন।

সাক্ষাৎকার নেয়া শিক্ষকদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার বাংলা শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ রয়েছেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, তাঁরা নিজ নিজ ছাত্র জীবনে পাঠ্যবইয়ে এই কবিতাটি  দেখেছেন ও পড়েছেন। তারা বলেছেন, শিক্ষকতা পেশার প্রতি আলাদা মূল্যবোধ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে এই কবিতাটি।

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, এই কবিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা শিক্ষকতা পেশায় এসেছেন।

পাঠকের জন্য ইন্টারনেট থেকে নিয়ে কবিতাটি দেয়া হলো :

শিক্ষকের মর্যাদা

কাজী কাদের নেওয়াজ

বাদশাহ আলমগীর

কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর ;

একদা প্রভাতে গিয়া,

দেখেন বাদশাহ-শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া;

ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে;

পুলকিত হৃদয় আনত-নয়নে ।।

শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি

ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

শিক্ষক মৌলভী

ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।

দিল্লীপতির পুত্রের করে

লইয়াছে পানি চরণের পরে,

স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!

ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।

হঠাৎ কি ভাবি উঠি

কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,

শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার

দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,

ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,

বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,

প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।

তার পরদিন প্রাতে

বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।

খাস কামরাতে যবে

শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,

পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?

বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,

নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”

শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,

কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”

বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে

নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,

পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।

নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে

ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে

কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-

“আজ হতে চির উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির

সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর”

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।