বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৩০০ স্কুল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক | জুলাই ৩

অকালবন্যায় সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ কয়েকটি জেলার হাওর অঞ্চলে ব্যাপক ফসলহানি ও মাছ মারা যাওয়ার দুই মাস পর এবার মৌলভীবাজার ও সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে।

ভারী বর্ষণ ও ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বের মৌলভীবাজার ও সিলেটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির গত রোববারও উন্নতি হয়নি। দুই জেলায় পানিবন্দী হয়ে আছে সাড়ে চার লাখ লোক। পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে দুই জেলার তিন শতাধিক বিদ্যালয়ে। এদিকে উত্তর-পশ্চিমের নীলফামারীতে তিস্তার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

গত এপ্রিলে অকালবন্যায় সুনামগঞ্জে ওই অকালবন্যায় ১৫৪টি হাওরের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। তবে স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, হাওরের ৯০ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মৌলভীবাজারে গতকাল নতুন করে বন্যার পানি বাড়েনি। কিন্তু কুশিয়ারা নদী এবং হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরের পানি না কমায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলার ১৪২টি প্রাথমিক ও ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে।

জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিলেও বিশেষত হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওর এলাকায় এর প্রকোপ বেশি। এখানকার অনেক গ্রামবাসী প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। বড়লেখায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল বলেন, পানি খুব বাড়েনি। তবে বড় সমস্যা যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা। অনেক দিন ধরে রাস্তায় পানি। রাস্তায় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ।

জুড়ীতে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কুলাউড়ার ৭০টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এ উপজেলায় আটটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার ভুকশিমইল ইউপির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ বাড়িঘরে পানি উঠেছে।’

রাজনগর উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার মানুষ। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। পানি ওঠায় অনেকে মাচা বেঁধে কোনো রকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এখানে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের দুই কিলোমিটার স্থান তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বাস চলাচল। অপর দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১৫-২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ১৩টি উপজেলার নয়টিতে অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী। পানি ওঠায় ১৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা। ভারত থেকে নেমে আসা ঢলেই মূলত এ বন্যা দেখা দিয়েছে।

পানিবন্দী হয়ে পড়ায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। অনেকে ঘরের ভেতরেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার জানান, বৃষ্টিপাত না কমা পর্যন্ত বন্যার উন্নতির সম্ভাবনা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে সহায়তা বাড়ানো হবে।

গতকাল বিকেলে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

ভারী বর্ষণ ও ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে নীলফামারীতে গত দুদিন ধরে এ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ডিমলা ও জলঢাকার নিম্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, শনিবার ভোররাত থেকে তিস্তার পানি বেড়ে বিকেলে কিছু কমলেও রাতে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এ ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, টাপুরচর, ঝিঞ্জিরপাড়া ও মেহেরটারী গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

খালিশা চাপানি ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, দুদিন ধরে তিস্তার পানি বেড়ে পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, সতিঘাট ও ছোটখাতা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।