নওগাঁ প্রতিনিধি,৩০ নভেম্বর:
নওগাঁ সদর উপজেলার ‘ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় আটজন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) উত্তীর্ণ হতে না পেরেও আত্মীয়, রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ার সুবাদে অনেকের ফরম পূরণ করার সুযোগ হয়েছে। তবে এই আটজন পরীক্ষার্থী তাদের ফরম পূরণ করতে পারেনি।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়ে প্রধান শিক্ষক বছর শেষে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। বিদ্যালয়ের বিষয়গুলো বাহিরে যেন প্রকাশ না পায় এজন্য শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণে ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মানবিক শাখায় অনলাইন খরচসহ ফরম পূরণে ফি ২ হাজার টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ফি ২ হাজার ১০০ টাকা করে নেয়ার নিয়ম।
কিন্তু নওগাঁ সদর উপজেলার ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বোর্ড নির্ধারিত ফিয়ের সঙ্গে কোচিং ফি নামে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কোচিং ফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং টাকা নেয়ার কোনো রসিদ দেয়া হয়নি।
এবার বিদ্যালয় থেকে ৮৬ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা থেকে ৩০ জন কৃতকার্য হয়। ৭৮ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে এসএসসি পরীক্ষা অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখা থেকে ৩৭ জন এবং মানবিক শাখা থেকে ৪১ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী একাধিক বিষয়ে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়।
তবে প্রধান শিক্ষক তার উদাসীনতার কারণে শিক্ষার্থী আবু নাঈম, স্বাধীন, মুকুল, মোস্তফা, বাঁধন ও মিসবাউলসহ আটজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফয়সাল হোসেন গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। তার মামা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার সুবাদে কোচিং ফি ১ হাজার টাকাসহ ৩ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাঈম জানায়, ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। আর্থিক দৈন্যতার কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারতাম না। প্রধান শিক্ষক বলেছিলেন-পরীক্ষা দেয়ার দরকার নাই। কারণ তুমি ঠিকমতো ক্লাস করনি। সে জানায়, ঠিকমতো ক্লাস করতে না পারায় প্রধান শিক্ষক ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানাও করেছিলেন। পরে অনুরোধ করে ৭০০ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ফরম পূরণের কথা বলি- তখন স্যার আজ নয়, কাল বলে ৮/৯দিন ঘুরায়।
আবু নাঈম জানায়, আমার পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও স্যারের কারণে আর সম্ভব হচ্ছে না। যে ৭০০ টাকা দিয়েছিলাম সেটাও আর ফেরত দিবেন না বলে প্রধান শিক্ষক সাফ জানিয়ে দেন। অথচ কয়েকটা বিষয় ফেল করার পর অনেকেই ফরম পূরণ করেছে।
মানবিক বিভাগের এক শিক্ষার্থী আবু রায়হান জানায়, তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে ইনফেকশন হওয়ায় সাধারণ বিজ্ঞান ছাড়া বাকি সব বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু ফলাফলের সময় প্রধান শিক্ষক সব বিষয়ে অকৃতকার্য (ফেল) করিয়ে দেয়। পরে ফরম পূরণ ও কোচিং ফিসহ ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। আর কোচিং ফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং কোনো রশিদ দেয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউল হক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা টেস্ট পরীক্ষা অকৃতকার্য হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় কয়েকজনকে ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২১ নভেম্বর ফরম পূরণের সময় শেষ হয়ে গেছে। যাদের ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি তারা তো নিজের নাম লিখতে ভুল করে। এ ছাড়া কোচিং ফি বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, কোচিং বাধ্যতামূলক করার কোনো নিয়ম নাই। এ ছাড়া বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়ার নিয়ম নাই। এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
by