প্রধান শিক্ষকরা কেউ ক্লাসে থাকেন না: গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, একজন শিক্ষক এক স্কুলে তিন বছরের বেশি সময় থাকতে পারবেন না। অনেক শিক্ষক এক জায়গায় নয় দশ বছর থাকছেন। তাই এনিয়ে বদলি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কেউ ক্লাসে থাকেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বুধবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কারিতাস আলোঘর প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধান শিক্ষক টিও অফিসে কাজের কথা বলে চায়ের দোকানে গিয়ে আড্ডা দেন । যখন বিদ্যালয়ের অভিভাবক থাকে না তখন ঠিকমত ক্লাস হয় না। এই অবস্থা পাল্টাতে প্রত্যেক স্কুলে একজন করে অফিস সহকারী নিয়োগ দেয়া হবে। যাতে করে প্রধান শিক্ষককে টিও অফিসে যেতে না হয়।

মানসম্মত শিক্ষা চালু করতে গিয়ে কি করা প্রয়োজন তার সবই সরকার করবে জানিয়ে সবার সহযোগিতা চান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্গম চর অঞ্চলে কিভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হবে সে বিষয়টিও দেখবে সরকার।

জাকির হোসেন বলেন, ছোট বাচ্চাদের ঘাড়ে বইয়ের বোঝা দিয়ে তাদের মেধা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘কেজি, মেজি এই সেই করে সর্বনাশ করা হচ্ছে বাচ্চাদের’ । সরকার এব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৃগোষ্ঠি, আদিবাসি উপজাতি বুঝিনা, বিভিন্ন ভাষাভাষি আছে তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা দেয়া হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে শিক্ষক নেয়া হবে। তারা নিজেদের ভাষা শেখানোর পাশপাশি বাংলা ও ইংরেজি ভাষাও শিক্ষা দেবেন।

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষার মেরুদন্ড প্রাথমিক শিক্ষা তাই সবাই মিলে মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা চালু করতে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে তাদের আর্থিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে দেখবো। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের সব কিছু সম্ভব। কিন্তু সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। শিক্ষা নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করে আমার এলাকায় ঘুষ দুর্নীতি করে তেলবাজি করে। গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে ৫ হাজার ১০ হাজার টাকা নিচ্ছে চাকরি দেয়ার নামে। তাদের চাকরি হচ্ছে না। এনজিওগুলো সুন্দরভাবে বাছাই করতে হবে। যারা শিক্ষা বোঝে না, তারা যেন এনজিওর সুনাম নষ্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কারিতাস বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডক্টর ফাদার প্রশান্ত টি রিজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত হেড অব অপারেশনস দোরথে বোসে, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর পরিচালক (অর্থ প্রশাসন ও বাস্তবায়ন) একেএম মাহবুবুর রহমান সরদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ফ্রান্সিস অতুল সরকার, আলোঘর প্রকল্পের পরিচিতিমূলক বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান শিশির অ্যাঞ্জেলা রোজারিও। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ।

ফ্রান্সিস অতুল সরকার বলেন, ‘কারিতাসের আলোঘর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কারিতাস ফ্রান্সের সহযোগিতায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারিতাস আলোঘর প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র, আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী শিশুদের সম্পৃক্ত করে দেশের ছয়টি বিভাগের (চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট) ২৭টি জেলার ১০৪টি উপজেলায় ১০০৫টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের (৪-১৪ বয়সের) ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৯ জন শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ শিক্ষার্থী কখনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি এবং ৫৮ হাজার ৫৮৯ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু। এদের মধ্যে ১১ হাজার ৮১০ জন শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪২ জন চরম প্রতিবন্ধী শিশুকে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গম ও ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন পার্বত্য এলাকার ৯৫৬ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে হোস্টেলে রেখে (খাবার, আবাসন ও শিক্ষা উপকরণ) প্রাথমিক শিক্ষায় অর্ন্তভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি এই সকল শিশুদের পিতামাতাদেরকে পারিবারিক জীবন দক্ষতার বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।