তরুণদের যৌন সমস্যায় নতুন সমাধান

sexual_problemসম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যৌনতায় সক্রিয় দেশটির তরুণদের ১০ শতাংশই গত এক বছরে বেডরুমে ‘বেদনাদায়ক যৌন সমস্যায়’ ভুগেছেন।

গবেষকরা ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সী ২৩৯২ জন তরুণের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই বিষয়টি বের করে নিয়ে আসেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫১৭ জনই আবার যৌনজীবনে নিষ্ক্রিয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যৌনজীবনে সক্রিয় নারীদের ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষদের ৩৪ শতাংশই গত একবছরে এক বা একাধিক যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা তাদেরকে এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত ভুগিয়েছে।

নারীদের ৯% এবং পুরুষদের ১৩% বলেছেন, তারা যে যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন, তা এতটাই তীব্র ছিল যে পরিণতিতে তারা পীড়িত বোধ করেছেন।

নারীদের জন্য প্রধান ‘পীড়াদায়ক’ অভিযোগ ছিল তারা অর্গাজম বা চূড়ান্ত যৌন সুখানুভূতি লাভে ব্যর্থ হয়েছেন। আর পাঁচ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

যুবকদের প্রধান সমস্যা ছিল, দ্রুত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া (৫%) আর লিঙ্গোত্থান না হওয়া এবং তা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে না পারা (৩%)।

ড. ক্রিস্টিন মিচেল যিনি লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে গবেষণাটি শুরু করেছিলেন, তিনি বলেন, ”আমাদের গবেষণায় বিস্ময়কর যে তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, শুধু ব্রিটেনের বুড়োরাই অবসাদমূলক যৌন সমস্যায় ভুগছেন না বরং অসংখ্য নব যৌবনপ্রাপ্তরাও এমন সমস্যায় ভুগছেন।”

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত পেশাদার লোকদের উচিত ‘যৌবনের শুরুতেই যৌন সমস্যা নিয়ে তরুণদেরকে খোলামেলা কথা বলা এবং এর সমাধানে চেষ্টা করার সুযোগ-সুবিধা সরবরাহের ব্যবস্থা করা’।

ড. মিচেল বলেন, ”আমরা যদি যুক্তরাজ্যের জনগণের যৌনজীবনকে সুখী করতে চাই তাহলে লোকে তাদের যৌনজীবন শুরু করার সময়ই আমাদেরকে তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। নয়ত যৌনতাসম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, উদ্বেগ বা লজ্জার কারণে অনেকেই জীবনভর যৌন সমস্যায় ভোগার ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন। যা পরিণতিতে যৌন আনন্দ এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ককেও ধ্বংস করবে।”

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যৌন সমস্যায় আক্রান্ত তরুণদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ তাদের পরিবার, বন্ধুমহল, গণমাধ্যম বা ইন্টারনেটে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ চেয়েছেন। অন্যদিকে, পুরুষদের মাত্র ৪ শতাংশ এবং নারীদের ৮ শতাংশ যৌন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শের জন্য গিয়েছেন।

একবছর ধরে যৌনতায় লিপ্ত হননি এমন নারী-পুরুষদের ১০% জানিয়েছেন, যৌন সমস্যার কারণেই তারা যৌনমিলন এড়িয়ে চলছেন।

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর প্রফেসর কায়ে ওয়েলিংস বলেন, ”যুক্তরাজ্যের যৌন শিক্ষাব্যবস্থায় যৌনমিলনে তৃপ্তির বিষয়টি প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তরুণদের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, ”যৌনশিক্ষার মাধ্যমে যৌনতাসম্পর্কিত প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো খণ্ডানো, যৌন তৃপ্তির বিষয়ে আলোচনা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্কে লিঙ্গসমতা উৎসাহিতকরণে অনেক কিছুই করা সম্ভব। বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহজ যোগাযোগ গড়ে তোলা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্ব সম্পর্কেও তরুণদেরকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে তরুণরা তাদের যৌনজীবনের সমস্যাগুলো আরো সহজে বুঝতে এবং মোকাবিলা করতে পারবে।”
সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।