জন্মের পর রাস্তায় নবজাতক : হাসপাতালে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ২ এপ্রিল:

মিরপুর স্টেডিয়াম গলির মুখে রাত সাড়ে ৮টার দিকে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ও নড়াচড়া দেখতে পান নাফিসা ইসলাম অনন্যা। তার খবরে ছুটে আসেন স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আহাদ। মাতৃ স্নেহে বুকে নিয়ে বুঝতে পারেন নবজাতকের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এরপর নিজ পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন নাফিসা-মেহেদী দম্পতি।

ঘটনাটি গত ২৫ মার্চ রোববার দিনগত রাতের। রাজধানীর মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালে চারদিন চিকিৎসার পর আসাদগেইট সংলগ্ন কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় সেখান থেকে নেয়া হয় শ্যামলীস্থ শিশু হাসপাতালে।

শিশুটি উদ্ধার ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া নাফিসা ইসলাম চিত্রকর ও চ্যানেল আইয়ের আর্টিস্ট। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নির বোনের মেয়ে। সোমবার দুপুরে কেয়ার হাসপাতালে কথা হয় নাফিসার সঙ্গে।

তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ (রোববার) রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে যান। এরপর কাছে গিয়ে ওড়নায় পেচানো অবস্থায় নবজাতক শিশুর নড়াচড়া দেখে কোলে তুলে নেন।

তিনি বলেন, ‘দেখেই বুঝতে পারি বাচ্চাটির জন্ম কিছুক্ষণ আগে। শরীরে তখনো জন্মের আভা স্পষ্ট। নাড়ি দিয়ে পেচানো নবজাতক শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। দ্রুত নিজের পরিচয় দিয়ে মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালে পপি নামে ভর্তি করাই।’

‘চিকিৎসকরা বাচ্চাটির বাঁচানোর আশাই প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছিল। আমার মধ্যে অদ্ভুত খারাপ লাগা কাজ করছিল। কান্নায় ভেঙে পড়ি। মনে হচ্ছিল বাচ্চাটি আমারই। অনেক অনুরোধের পর আমার জিম্মায় সেখানে ভর্তি করে অক্সিজেন দেয়া হয়। নীল হয়ে যাওয়া বাচ্চাটি ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে থাকে। ২৯ তারিখ রাতে চিকিৎসকরা ভেন্টিলেশন দেয়ার কথা জানান, যা ওই হাসপাতালটিতে (এম আর খান শিশু হাসপাতাল) নেই। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে আসাদগেইট সংলগ্ন কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ -বলেন তিনি।

চিত্রকর ও চ্যানেল আইয়ের আর্টিস্ট নাফিসা বলেন, আমার মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। আমার কাজের শত ব্যস্ততা ফেলে শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ওকে সুস্থ করে আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পেলে ফিরিয়ে দেব। নইলে কোনো নিঃসন্তান দম্পতির কোলে তুলে দেব।

বাচ্চাটি উদ্ধার শেষে মিরপুর এম আর খান হাসপাতালে ভর্তির পর মিরপুর মডেল থানায় বিষয়টি জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন নাফিসা। জিডি নং ১৮৮২।

নাফিসার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান আহাদ বলেন, নবজাতকটিকে বাঁচানোটাই ছিল আমাদের ইচ্ছে। যে কারণে ছুটোছুটি করেছি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে চলেছি।

jagonews24

কেয়ার হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার রুমা পারভীন জানান, শিশুটিকে ভেনটিলেশনে প্রথমে শতভাগ অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন তা কমানো হয়েছে। সি পাইপ দিয়ে ৮০ ভাগ অক্সিজেন যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমিয়ে বাচ্চাটি সার্ভাইভ করতে পারবে। প্রি ম্যাচিউর্ড হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া জন্ডিসের সমস্যাও রয়েছে।

এ ব্যাপারে মিরপুর মডেল থানার এসআই আকলিমা খাতুন জানান, আমরা বিষয়টি অবগত। শিশুটির যেহেতু চিকিৎসা জরুরি, সেটি গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে উদ্ধারকারী নাফিসার সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর নাফিসার সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।