কক্সবাজারে প্রশাসন ও সাংবাদিকের নামে ১৬ শিক্ষকের জমজমাট ভর্তি কোচিং বাণিজ্য

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার শহরে সাংবাদিক ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার অবাধে  চলছে দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের  শিক্ষকদের ভর্তি কোচিং বাণিজ্য।  

সেই সাথে ভর্তির নিশ্চয়তা দিয়ে কোচিং এর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু শিক্ষক। ভর্তি কোচিং এর বিষয়টি প্রশাসনের জানা নেই বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।

শহরের তারাবনিয়ার ছরার মো: হাসান নামের এক অভিভাবক জানান-‘ সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে অবাধে অবৈধভাবে ভর্তি কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন কোচিং করে জনপ্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আগাম দুই হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। জানা যায়,কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জন ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন।

এবছর প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় কোচিং  বানিজ্য বহুগুণে বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অবিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে কোচিং বাণিজ্য নিয়ে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা রিতিমত আঁতকে উঠার মত।

শহরের দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি কোচিং নিয়ে বাণিজ্য করছেন দেড় ডজন শিক্ষক। এছাড়া ও রয়েছে ৪ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আগামী ১৯ ডিসেম্বর সোমবার দু’ স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করেছে সরকার।প্রতিবছর ডিসেম্বর আসলে তৎপরতা বেড়ে যায় শহরের ২ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চিহ্নিত কতিপয় কোচিং বানিজ্যকারি শিক্ষকের।

প্রশাসনের কালো তালিকায় নাম থাকা উক্ত শিক্ষকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রাথমিক সমাপনির পরীক্ষা চলাকালিন বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে নানা কৌশলে কোচিং এর জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ভাড়ানো, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন উপহার পাঠিয়ে ছাত্র সংগ্রহসহ নানা কৌশল অবলম্বন করে কোচিং বানিজ্যে জড়িত সরকারি ২ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন। অনেকে জোটবদ্ধ হয়ে আবার অনেকে  প্রশাসনের অভিযান থেকে রক্ষা পেতে নানা ভাবে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে ৪ জন, মোহাজের পাড়া ৫ জন, গোলদীঘির পাড়ে ৩ জন , ঘোনারপাড়ায় ২ জন, বৈল্ল্যাপাড়ায় ২ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রশাসনের অভিযানকে ফাঁকি দিতে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে দুই ব্যাচ, বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোচিং চলে। কারণ প্রশাসনের অফিস সময়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুচতুর অসাধু শিক্ষকরা কোচিং বন্ধ রাখেন। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকরা  এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন।

সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে এবং সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে এমন কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কোচিং শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান বলেন-‘কোচিং এর বিষয়ে জানা নেই। যদি শিক্ষকরা এমন করেন তাহলে অন্যায় করছেন। শিঘ্রই কোচিং বাণিজ্য বন্ধে অভিযান চালানো হবে।

কোচিং  বানিজ্য বন্ধে পদক্ষেপ বিষয়ে ককসবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক এবং ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব রাম মোহন সেন জানান “আমি কোচিং না করাতে সকল শিক্ষকদের নোটিশ প্রদান করেছি।

তারপর ও  কোন শিক্ষক যদি কোচিং করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়ি থাকবেনা”।

এদিকে শহরের দু’ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২ পালা করে ১ পালায় ১২০ জন করে মোট ৪৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।

কোচিং বানিজ্যরত শিক্ষকগণ কে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রশ্ন প্রনয়ন, খাতা মূল্যায়ন ,ফলাফল প্রস্তুতের কোন দায়িত্ব প্রদান করেননি।তবু উক্ত শিক্ষকরা অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতি বছর।

ভর্তির প্রশ্নপত্র প্রনয়নে দু’ সরকারি বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের কোন ধরনের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকা সত্বেও পছন্দের বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে ৪৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০ লক্ষ টাকার মত ভর্তি বাণিজ্যে মেতে উঠেছে।

সরকার কোচিং বন্ধে নানা পদক্ষেপ আইন করলেও তা কার্যত ফাইলবন্দিই রয়েছে। মাত্র ২০ দিনে ২ হাজার টাকা অনেক অভিভাবক যোগাড় করতে না পেরে সন্তানের মানসিক অবসাদের জবাব দিতে পারছে না।

ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং মানসিক চাপ কতটুকু সামাল দিতে পারে তা সচেতন মহলের ভাবা উচিত।শিক্ষাকে প্রতি বছর উক্ত শিক্ষকগণ বাণিজ্যকরণ করলেও কোন ধরনের শাস্তি না হওয়ায় কোচিং বাণিজ্য নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১২ সালে উক্ত কোচিং বানিজ্যের বিরুদ্দে তৎকালিন শিক্ষা শাখার নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট সেলিনা কাজী অভিযান চালিয়ে ৪ শিক্ষককে আটক করলে গত ২ বছর কোচিং বানিজ্য হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু এবার নতুন করে যোগ হয়েছেন আরো ৫ জন।

ফলে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি নিয়ে কোচিং নতুন মাত্রা পেয়েছে। উক্ত অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।