এনজিওর ঋণ পরিশোধে সন্তান বিক্রি

মো. দ্বীন ইসলাম। পেশায় জেলে। স্ত্রী কুলছুমা বেগম ও ৪ মেয়েকে নিয়ে থাকেন চাঁদপুরের মাদ্রাসা রোড এলাকায়। হতদরিদ্র ওই দম্পতি এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। উপায় না পেয়ে গত সোমবার তাদের নবজাতক কন্যা সন্তান হাফসাকে বিক্রি করে দেন মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। এদিকে একই এলাকার নিঃসন্তান দম্পতি সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম হাফসাকে পেয়ে বেজায় খুশি। তারা নতুন করে শিশুটির নাম রেখেছেন মরিয়ম আকতার ফাতিমা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৪ অক্টোবর বেলা ১১টায় চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্ম দেন কুলছুমা বেগম। নাম রাখেন হাফসা। চতুর্থবার কন্যা সন্তান হওয়ায় স্বামী দ্বীন ইসলাম খুশি ছিলেন না। তিনি স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজও করেন। একদিকে চার কন্যা সন্তান অপর দিকে ঋণের ৭০ হাজার টাকা। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করে দেন কুলছুমা ও দ্বীন ইসলাম দম্পতির কাছে। বোনকে বিক্রির কথা স্বীকার করে তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া বড় বোন লাবনী আক্তার বলে, ‘আর বইনেরে দিয়া দিছে। এক কাগজে নাম লিখে আর বাপ-মা, নানু ও মামা দিয়া দিছে। আর তারা আমাগোরে ত্রিশ হাজার টাকা দিছে।’ বিষয়টি স্বীকার করেছেন লাবনীর মা কুলছুমা বেগম। তিনি জানান, যেহেতু সন্তান মানুষ করার সাধ্য নেই; অন্তত সন্তান বেঁচে থাকুক এমন আশা থেকেই বিক্রি করে দিয়েছি। কিছু টাকাও পেয়েছি। কী করব? এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ঘরে তিন মেয়ে আছে। এনজিও ‘আশা’ থেকে ৭০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। সব মিলিয়ে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই দিয়ে দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে নবজাতক মেয়েটির নতুন মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার নিজের সন্তান নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে নবজাতক কেনার চেষ্টা করছিলাম। নিজের সন্তানের মতোই মানুষ করবেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানকে অবগত করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।